ছবি: সংগৃহীত
নাট্যদল আরশিনগরের চতুর্থ প্রযোজনা ‘সিদ্ধার্থ’। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক হেরমান হেসের লেখা উপন্যাসের নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন রেজা আরিফ। এর আগে দুই ধাপে মোট ১১টি প্রদর্শনী হয়েছে এই নাটকের। দর্শকনন্দিত এই নাটক আবারও মঞ্চে আলো ছড়াতে আসছে।
এবার আরশিনগর টানা তিন দিনে চারটি প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। ১৯শে থেকে ২১শে নভেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হবে সিদ্ধার্থের। প্রথম দুইদিন, ১৯শে ও ২০শে নভেম্বর, বুধ ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে একটি করে প্রদর্শনী এবং ২১শে নভেম্বর, শুক্রবার বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে থাকবে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী।
গৌতম বুদ্ধের আরেক নাম সিদ্ধার্থ হলেও হেরমান হেসের সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ নয়। নির্দেশক রেজা আরিফ বলেন, গৌতম বুদ্ধের ঔজ্জ্বল্যে আড়াল হয়ে পড়া গৌতমের ব্যক্তিগত মনোজগতের রঙে সিদ্ধার্থকে আঁকা হয়েছে।
নাটকের গল্পে দেখা যাবে, ব্রাহ্মণ কুমার সিদ্ধার্থ পিতার অমতে ঘর ছাড়ে, সন্ন্যাস গ্রহণ করে। দীর্ঘ তিন বছর সন্ন্যাসব্রতের কঠোর সাধনা, আত্ম-নিগ্রহ, উপবাস, দৈহিক নির্যাতনের পর সন্ন্যাস ত্যাগ করে। এরপর সৌভাগ্য হয় বুদ্ধের সাক্ষাৎ লাভ ও উপদেশ শোনার আশ্চর্য অভিজ্ঞতার।
কিন্তু বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ না করে পথে বেরিয়ে পড়ে সিদ্ধার্থ। পথে দেখা হয় নগরের শ্রেষ্ঠ বারাঙ্গনার সঙ্গে, পরিচয় হয় নতুন এক জীবনের সাথে। সে জীবনের নাম সংসার, সন্তান লাভের খেলা। দীর্ঘ কুড়ি বছর সে জীবনের নেশায় বুদ হয়ে থাকার পর সিদ্ধার্থের মনে হয় এ খেলা শেষ হয়েছে।
সিদ্ধার্থ সে জীবন ত্যাগ করে আশ্রয় নেয় নদীর কাছে। নদীর কাছে থাকতে থাকতে সিদ্ধার্থ শেখে নদীর ভাষা। উপলব্ধি করে জীবনের বৃহত্তর মানে। জীবন ও মৃত্যু, পাপ ও পূণ্য, বোধ ও নির্বুদ্ধিতা, সবকিছুরই প্রয়োজন আছে জীবনে। এ সকল অভিজ্ঞতা জীবনকে পূর্ণ করে। এ অভিজ্ঞতার নামই জ্ঞান। যা কাউকে শেখানো যায় না, অর্জন করতে হয়। নির্দেশনা প্রসঙ্গে রেজা আরিফ বলেন, 'প্রযোজনাটির চূড়ান্ত মনোযোগ জীবনোপলব্ধির প্রতি, বাহ্যিক আভরণে নয়।'
যারা পূর্বে মঞ্চে ‘সিদ্ধার্থ’ দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই নির্দেশকের এই বক্তব্যের সাথে একমত হবেন। নাটক শেষ করে জীবন সম্পর্কে নতুন ধারণা আর অজস্র প্রশ্ন নিয়ে বের হবেন থিয়েটার থেকে। তবে বাহ্যিক আভরণের দিকে যে নির্দেশক একেবারেই মনোযোগী নন, সে কথাও পুরোপুরি ঠিক না।
মঞ্চে অভিনেতাদের দৃষ্টিনন্দন কোরিওগ্রাফি, কম্পোজিশন আর আলোর অপূর্ব ব্যবহার মুগ্ধতা ছড়ায় মুহুর্মুহু। অভিনয় পরিকল্পনা মুখ্যত চরিত্রানুগ হলেও কখনো কখনো বর্ণনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। মঞ্চ রাখা হয়েছে নিরাভরণ। পোশাক পরিকল্পনা করা হয়েছে নাট্যধর্মী। পুরো নাটকে আলোর প্রয়োগ ছিল সামান্য। কস্টিউম ও আলোক পরিকল্পনায় এরই মধ্যে পুরষ্কৃত হয়েছেন নাটকের ডিজাইনারেরা।
মঞ্চে
পার্থ প্রতিম, কাজী নওশাবা আহমেদ, জিনাত জাহান নিশা, ওয়াহিদ খান সংকেত, নাজমুল সরকার নিহাত, মাঈন হাসান, রেফাত হাসান সৈকত, ইসনাইন আহমেদ জিম, শাহাদাত নোমান, মাইনউদ্দিন বাবু, প্রিন্স সিদ্দিকী, এস. এম. মাহাফুজুর রহমান, আরিফুল ইসলাম নীল, আলী আক্কাছ আকাশ, পলি পারভীন, আজমেরী জাফরান রলি, প্রজ্ঞা প্রতীতি, জিতাদিত্য বড়ুয়া, নাসিম পারভেজ প্রভাত, জেরিন চাকমা, ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া, সাজ্জাদুল শুভ, নাফিসা নূর নোভা, দেবাশীষ চন্দ্র দুর্লভ, অদ্বিতীয়া ধর পদ্য, অভিজ্ঞান ধর কাব্য, শাকিল মাহমুদ মিহির, উৎপল নীল, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, বর্ণময় হৃদয়, সারিকা ইসলাম ঈষিকা, ইমাদ ইভান, রাদিফা নারমিন, হিমালয় রাজপাল হিমু, ফারজানা জলি।
নেপথ্যে
উপন্যাস: হেরমান হেসে
অনুবাদ: জাফর আলম
নাট্যরূপ ও নির্দেশনা: রেজা আরিফ
সহকারী নির্দেশক: নুসরাত জাহান জিসা
অভিনয় নির্দেশনা: পার্থ প্রতিম
প্রোডাকশন ডিজাইন: মো. সামিউল হক
প্রযোজনা অধিকর্তা: স্নেহাশীষ চন্দ্র দেবনাথ
মঞ্চ ও আলো: অনিক কুমার
পোষাক: জিনাত জাহান নিশা ও নুসরাত জাহান জিসা
কোরিওগ্রাফি: নুসরাত জাহান জিসা, আকাশ সরকার, প্রান্তিক দেব
দ্রব্য সামগ্রী: অনিক কুমার ও নুসরাত জাহান জিসা, শহিদ মৃধা
মঞ্চ সহকারী: তাপস সরকার রুদ্র
আলোক সহকারী: অভিক সাহা, শোভন চক্রবর্তী
আবহ সঙ্গীত তত্ত্বাবধান: সাদমান রাব্বি অন্তর, এস এম মাহফুজুর রহমান
আবহসঙ্গীত:
আরিফুল ইসলাম নীল, এস. এম. মাহাফুজুর রহমান, আকাশ তুহিন, নাজমুল সরকার নিহাত, জিনাত জাহান নিশা, উস্মিতা আনিলা, প্রজ্ঞা প্রতীতি, ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া, নাসিম পারভেজ প্রভাত, পার্থ প্রতিম, জিতাদিত্য বড়ুয়া, আজমেরী জাফরান রলি, প্রজয় বকশী, অদ্বিতীয়া ধর পদ্য, পলি পারভীন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ফারজানা জলি, হিমালয় রাজ পাল হিমু, আহসান মহিউদ্দিন খান বাপ্পা, সিলভিয়া ম্রোং।
মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা: নিতাই কর্মকার, শুভ মণ্ডল, নাজমুল রিগান, শহিদ মৃধা মৃধা, হাসান অমিত, আহসান মহিউদ্দিন খান বাপ্পা, মাহবুব আলম রনি, সাব্বির হাসান, জাহিদ হাসান যুবায়ের, সারিকা ইসলাম ঈষিকা, ইমাদ ইভান, শাহাদাত নোমান, ইসনাইন আহমেদ জিম ও আরশিজন।
মঞ্চ ব্যবস্থাপনা: পলি পারভীন
প্রযোজনা ব্যবস্থাপনা: ওয়াহিদ খান সংকেত।
খবরটি শেয়ার করুন