ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে আছে কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবার তারা নিজেদের সিনেমার দিকে নজর দিচ্ছে। মিসরের ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রগুলো পুনরুদ্ধার করে সংরক্ষণ করায় মনোযোগী হচ্ছে তারা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দর্শকের জন্য প্রদর্শন করা হলো পুনরুদ্ধারকৃত চলচ্চিত্রের পুনরুদ্ধারের আগের ও পরের ফুটেজ।
এর মধ্যে আছে হোসাম এল দীন মোস্তফার ‘আ ক্রাইম ইন আ কোয়ায়েট নেইবারহুড’ ও কামাল আল-শেখের ‘সানসেট অ্যান্ড সানরাইজ’। সিনেমা দুটো দেখার সময় দর্শকের মধ্য থেকে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছিল।
পুরনো ছবিগুলো নতুন স্পষ্টতা ও টেক্সচারে পুনরায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। এ কাজে প্রধান ভূমিকা রাখছেন উৎসবের সভাপতি হোসেইন ফাহমি। এটি মিসরের পুরনো চলচ্চিত্র পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নতুন সময়ের উদ্ভাসেরও ইঙ্গিত। তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি।
এ পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম মিসরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হোল্ডিং কোম্পানি ফর ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য ফিল্ডস অব কালচার অ্যান্ড সিনেমার সঙ্গে অংশীদারত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এটি আঞ্চলিক ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংরক্ষণ উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ফাহমি বলেন, ‘উদ্যোগটি এসেছে সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রযুক্তিতে নাটকীয় পরিবর্তনের ফলে। প্রযুক্তি পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমাকে তার সঙ্গে পরিবর্তন হতে হয়েছে।’
উৎসবের এ বছরের আসরে ২১টি পুনরুদ্ধারকৃত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক দর্শকের জন্য প্রতিটি সিনেমায়ই রাখা হয়েছে ইংরেজি সাবটাইটেল। কিন্তু এ উদ্যোগ কেবল উৎসবের প্রদর্শনীতেই সীমাবদ্ধ নয়।
ফাহমি একটি প্রেস রাউন্ড টেবিলে বলেন, ‘যদি আপনি চলচ্চিত্রগুলো পুনরুদ্ধার করেন এবং শুধু উৎসবে দেখান আর তারপর কেউ না দেখে, তবে তা বৃথা।’
তারা একটি প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক দর্শক সিনেমাগুলো দেখতে পাবে। উদ্যোগটি নতুন নয়। এর আগেও বিষয়টি নিয়ে এগোনো হয়েছে। তবে এবার পরিণতির দিকে এগোচ্ছে বলেই মনে হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত পুনরুদ্ধার করা ফুটেজ দর্শকের মধ্যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। এ সিনেমাগুলো মিসরের স্টুডিও যুগের দক্ষতা ও কারিগরি উৎকর্ষের প্রমাণ দেয়। ফাহমি মনে করেন, মিসরের স্বর্ণযুগের সিনেমা আমেরিকা ও ইউরোপের সিনেমার মতোই ছিল।
যদিও প্রথম পুনরুদ্ধারকৃত সিনেমাগুলো একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়, তবে এগুলোর কাজের পরিমাণ এখনো বিপুল। ফাহমি জানান, আরো অন্তত ১ হাজার ৩০০ সিনেমা তাদের পুনরুদ্ধার করতে হবে।
ফাহমি এ পুনরুদ্ধার উদ্যোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। দেশটি এক সময় বছরে প্রায় ৬০টি চলচ্চিত্র তৈরি করত এবং এগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় রফতানি করত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিবেশী দেশগুলোর বাজারে ক্ষতি ও মহামারি উৎপাদনকে গড়ে বছরে ১৬টি চলচ্চিত্র পর্যায়ে নামিয়েছে।
তার পরও তিনি জোর দেন যে মিসরীয় সিনেমা গভীরভাবে স্বতন্ত্র পরিচয় ধরে রেখেছে। তিনি বলেন, ‘যখন আপনি একটি মিসরীয় চলচ্চিত্র দেখেন, আপনি জানেন এটি মিসরীয় সিনেমা। আপনি নিজ সমাজ ও নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে যতই নিজেকে জড়াবেন, ততই আন্তর্জাতিক হবেন।’
বর্তমান সিনেমাগুলো দর্শকের সঙ্গে নিজেকে বা দর্শক নিজেকে যুক্ত করতে পারে না। সে তুলনায় ক্ল্যাসিক সিনেমাগুলো অনেক বেশি মৌলিক। ফাহমি আশা করেন, শুধু চমকপ্রদ দৃশ্যে নয়, মিসরের ক্ল্যাসিক সিনেমাগুলো চরিত্র, মেজাজ ও আবেগীয় নৈকট্য নিয়ে মানবতার ওপর ভিত্তি করে তরুণ নির্মাতাদের গল্প বলতে পুনরায় আকৃষ্ট করবে।
আঞ্চলিক উৎসব থেকে বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতাকে ফাহমি সমর্থন দেন। তিনি জানান, এ চলচ্চিত্র উৎসবে তারুণ্যকে যুক্ত করা প্রয়োজন। এ আয়োজনের মধ্য দিয়েই জাতীয় আর্কাইভ পুনরুজ্জীবিত করা জরুরি। তার মতে, ইতিহাস সংরক্ষণ করা নতুন নির্মাতাদের জন্য শক্ত ভূমি তৈরি করার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন