মরুভূমির শুষ্ক বাতাস থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকদের তৈরি একটি যন্ত্র। ছবি: এমআইটির সৌজন্যে
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ‘ডেথ ভ্যালি’ বা মৃত্যুর উপত্যকা। আসলেই তাই। যত দূর চোখ যায় শুষ্ক মরুভূমি আর রুক্ষ পাহাড়ের সারি। সহজে দেখা মেলে না প্রাণের। আর খাওয়ার পানি, সে তো দুষ্প্রাপ্য। তবে বিজ্ঞানের এই যুগে সমস্যা থাকলে, তার সমাধানও আছে। সে কথা মাথায় রেখেই এগিয়ে আসেন দেশটির ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকেরা। খবর সিএনএনের।
বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের চিন্তাভাবনা ছিল ভিন্ন। খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য নজর দেন অপ্রচলিত এক উৎসের দিকে—মরুভূমির শুষ্ক বাতাস। কাঠখড় পুড়িয়ে সফলও হয়েছেন তারা। ছোট জানালার আকৃতির একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। তাতে রয়েছে ‘হাউড্রোজেল’ নামের শোষক পদার্থ। এর সঙ্গে মেশানো হয়েছে লবণ। এই হাইড্রোজেল আবার ঘিরে রাখা হয়েছে কাচ দিয়ে।
হাইড্রোজেল বাতাস থেকে সরাসরি জলীয় বাষ্প শোষণ করে। শোষণ করা বাষ্পের পরিমাণ যত বাড়ে, ততই ফুলে ওঠে পদার্থটি। পরে আবার বাষ্প ছেড়ে দিয়ে আকারে ছোট হয়ে আসে। সেই বাষ্প ঘিরে থাকা কাচের দেয়ালে বিশুদ্ধ পানির কণার আকারে জমা হয়। পরে তা একটি নল দিয়ে গড়িয়ে পড়ে জমা হয় পাত্রে। এভাবে পানি সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন হয় না বিদ্যুতের। শুধু দরকার সূর্যের তাপ।
মরুভূমির বাতাস শুষ্ক হওয়ায় যন্ত্রটি থেকে আপাতত খুব বেশি পরিমাণে পানি সংগ্রহ করা যায় না বলে জানিয়েছেন এমআইটির যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সুয়ানহে ঝাও। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় দিনে একটি কাপের তিন ভাগের দুই ভাগ পরিমাণ সুপেয় পানি পাওয়া যাবে। আসলে এই যন্ত্রের লক্ষ্য হলো খুব শুষ্ক মরুভূমিতে মানুষের কাছে যেন অন্তত খাওয়ার পানিটুকু সরবরাহ করা যায়।
বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ কিন্তু নতুন কোনো কৌশল নয়। শত শত বছর ধরে প্রাচীন নানা কৌশলে সাগর ও পর্বত এলাকা থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে আসছেন মানুষ। পরে তা ঘনীভবন করে পানিতে পরিণত করা হয়। তবে এসব কৌশলে বাতাসে বেশি জলীয় বাষ্প থাকতে হয়। অধ্যাপক সুয়ানহে ঝাওসহ অন্য গবেষকেরা মিলে যে যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, তাতে খুব শুষ্ক পরিবেশেও বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করা যাবে।
এমন পরিবেশ থেকে পানি সংগ্রহের জন্য শোষক পদার্থের ওপর নির্ভর করতে হয়। এমন শোষক পদার্থের ছোট ছোট প্যাকেট জুতার বাক্সে দেখতে পাই আমরা। আর্দ্রতা শোষণ করে জুতাকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এগুলো। এই শোষকগুলো কঠিন। কিছু তরল শোষক আছে। তবে সুয়ানহে ঝাওয়ের যন্ত্রে ব্যবহৃত হাইড্রোজেল শোষকটি স্পঞ্জের মতো। এমনই আরেকটি শোষকের নাম অ্যারোজেল।
আমেরিকার অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পল ওয়েস্টারহফ বলেন, এই হাইড্রোজেলের বড় একটি সুবিধা হলো জলীয় বাষ্প শোষণ করে এটি নিজের আকারের তুলনায় ১০ গুণ পর্যন্ত ফুলে উঠতে পারে। এটি সস্তাও। এমআইটির আরেক অধ্যাপক ইভেনলি ওয়াং বলেন, সস্তা হওয়ার কারণে শিশুদের ডায়াপারে হাইড্রোজেল ব্যবহার করা হয়। আর হাইড্রোজেল খুব কম পরিমাণ শক্তি খরচ করে।
হাইড্রোজেল ব্যবহার করে বাতাস থেকে পানি সংগ্রহের গবেষণা আমেরিকার বাইরেও হয়েছে। যেমন লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে। দেশটির আতাকামা মরুভূমিকে বলা হয় মেরু অঞ্চলের বাইরে সবচেয়ে শুষ্ক স্থান। সেখানে হাইড্রোজেল ও লবণের মিশ্রণ ব্যবহার করে প্রতি বর্গমিটার জায়গায় দশমিক ১ গ্যালনের (দশমিক ৩৮ লিটার) মতো বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন