ছবি - সংগৃহীত
দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত বড় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, মোট কর্মসংস্থানে সরকারি চাকরির অংশীদারিত্ব মাত্র ৩.৮ শতাংশ। বেসরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ১৪.২ শতাংশ। ব্যক্তি উদ্যোগের মালিকানার মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় ৬১ শতাংশ। বাকি ২১ শতাংশ অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োজিত আছে। বেসরকারি খাত ও ব্যক্তি উদ্যোগ সংকটে পড়ায় বর্তমানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদিও এসব খাতে নিয়োজিত কর্মীরা বেশ কয়েক বছর থেকেই ঝুঁকিতে আছেন। বর্তমান সংকট তাদের ওপর মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, কাজ করার ক্ষমতা থাকার পরও দেশে পৌনে ২ কোটির বেশি মানুষের নিয়মিত রোজগারের নিশ্চয়তা নেই। এর মধ্যে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ সম্পূর্ণ রূপে বেকার। অর্ধবেকারের সংখ্যা ১৫ লাখ। এ ছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান না হওয়ায় অনিয়মিত কাজে যুক্ত আছেন আরও প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। এছাড়া প্রতি বছর নতুন করে শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছেন প্রায় ২১ লাখ মানুষ। এর মধ্যে দেশে-বিদেশে কাজ পাচ্ছেন ১৩ লাখ। বাকি প্রায় ৮ লাখ কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তার কারণে বেকার হচ্ছে। সব মিলিয়ে শ্রমশক্তির বিরাট একটা অংশ নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেকে কাজে লাগাতে পারছে না।
বর্তমান সময়ে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ নানা কারণে উৎপাদন ব্যবস্থায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। তার ওপর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কারখানায় হামলা, হয়রানিমূলক মামলা, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ভিত্তিহীন নানা প্রচারণায় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এসব কারণে কেউ নতুন বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না। ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর নানামুখী চাপ অব্যাহত থাকায় দেশে নতুন বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
হামলা-ভাঙচুরের ভয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও অনেক ব্যবসায়ীকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আমদানি-রপ্তানি বা বিনিয়োগ সংক্রান্ত জরুরি কাজেও অনেক ব্যবসায়ী বিদেশে যেতে পারছেন না। আবার যারা বিদেশে আছেন তারা দেশে আসছেন না। ব্যবসায়ীরা একপ্রকার ভীতিকর পরিস্থিতিতে আছেন।
যারা দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন, বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন, তারাও এখন খেলাপি ঋণের আশংকায় ভুগছেন। এসব কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে উৎপাদনমুখী শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গতিশীল করতে হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজমান ভয়ভীতি বা অস্বস্তি দূর করতে হবে।
বেকারত্ব সমস্যা এমনিতেই দেশের অর্থনীতির বিষফোঁড়া। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে,অনেকদিন ধরেই দেশে কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। দেশে জিডিপির অনুপাতে কর্মসংস্থান কম। এমনকি যখন উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল, তখনো জিডিপির অনুপাতে কর্মসংস্থান কম ছিল। এখন যখন প্রবৃদ্ধির গতি নিম্নমুখী, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, সেটাই স্বাভাবিক।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সুন্দর আগামীর জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমান অস্থির অনিশ্চয়তার সময়ে কারও পক্ষেই ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ কিংবা নতুন বিনিয়োগ একেবারেই সম্ভব নয়। সরকারকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
আই.কে.জে/