তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট মানুষের জন্য কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফরমে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় ইন্টারনেট এখন একটি অপরিহার্য মাধ্যম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্যের সহজপ্রাপ্যতা, তাদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতরকরণ ও পাঠ্য কার্যক্রমে ইন্টারনেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে সরকারিভাবে নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায় থেকে স্কুল,কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও কম্পিউটারকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা দিনদিন প্রসারিত হলেও, মোবাইল ডাটা ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে। উচ্চমূল্যের ইন্টারনেটের কারণে গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সেবার সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা শতভাগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বিরাট সংখ্যক মানুষ সুবিধা গ্রহণের বাইরে থাকছে। যার ফলে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা,স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সেবা খাত যেভাবে গতিশীল হওয়ার সুযোগ ছিল, সেভাবে অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস, কোর্স ও রিসোর্স সংগ্রহ করে থাকে। তবে দেশের অনেক শিক্ষার্থী শুধু ইন্টারনেটের বেশি দামের কারণে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু শিক্ষা নয়, ইন্টারনেটের দামের কারণে গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়-বাণিজ্যও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে না। যার সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়-বাণিজ্য হতে শুরু করে দাপ্তরিক কার্যক্রম-সকল কিছুতেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বেশি খরচের কারণে ইন্টারনেটের সুবিধা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। যা দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে একধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ইন্টারনেটের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ কম দামে সেখানে ইন্টারনেট পাওয়া যায়।
কম দামে ইন্টারনেট পেলে দেশের সাধারণ জনগণ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে।গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার সুবিধা পাবে। স্বাস্থ্যসেবা,কৃষিতথ্য, ই-গভর্ন্যান্স, ডিজিটাল পেমেন্টসহ সরকারি সেবা সরাসরি গ্রহণ করতে পারবে। এর জন্য ইন্টারনেটের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা জরুরি অত্যাবশ্যক।
মোবাইল কোম্পানি গুলোর এক দাম এক রেট চালু করা প্রয়োজন। কিন্তু তারা বাজারে ছোট, মাঝারি, আনলিমিটেড নানা প্যাকেজে মানুষকে বিভ্রান্ত করে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্যাকেজ শেষ হওয়ার আগে মেয়াদ চলে যাচ্ছে, আবার কখনো মেয়াদ আছে ডাটা নেই। কিন্তু কিভাবে এগুলো হচ্ছে এর কোনো জবাব নেই। যদিও এমনটি হওয়ার কথা নয়। কারণ ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১(সংশোধিত-২০১০) এর বলে প্রণীত নির্দেশিকার ৭.৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্যাকেজ নিদিষ্ট সময়ের আগে বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটর বাংলায় এসএমএস-এর মাধ্যমে তা গ্রাহককে অবহিত করবে। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত ডাটা/মিনিট/এসএমএস অবশ্যই মোবাইল অপারেটরকে গ্রাহক কর্তৃক নির্দিষ্ট ক্রয়কৃত নতুন প্যাকেজে যুক্ত করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আইন কেউ মানছে না। বরং নিত্য নতুন প্যাকেজের নামে নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ পাতছে। গ্রাহকরা প্রতারণায় পড়ছে,মোবাইল অপারেটররা শত মত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারি পর্যায় থেকে বার-বার কঠোরতার কথা বলা হলেও মোবাইল কোম্পানিগুলো থোড়াই কেয়ার করছে। বরং বিভিন্ন প্যাকেজের নামে ফন্দিফিকির করে দাম আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে,ইন্টারনেট এখন আর শুধুমাত্র বিনোদনের অংশ নয়।এটি এখন জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ইন্টারনেট সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।
ওআ/ আই.কে.জে/