ছবি: সংগৃহীত
নেত্রকোনায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে উকিল মুন্সির স্মরণানুষ্ঠান হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যালয়ে ওই অনুষ্ঠান হয়। তবে অনুষ্ঠানের ব্যানারে উকিল মুন্সির ছবি মনে করে ব্যবহার করা হয়েছে অন্য এক ব্যক্তির ছবি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
নেত্রকোনা শিল্পকলা একাডেমি ও কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাউলসাধক উকিল মুন্সির স্মরণানুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুদ জামান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আরিফুল ইসলাম সরদার। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেলা সংস্কৃতি কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহা।
উকিল মুন্সির জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেন রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ গবেষক গোলাম মোস্তফা ও নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের ব্যানারে উকিল মুন্সির নামে একটি ছবি ব্যবহার নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অনুষ্ঠান চলাকালে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যেও কেউ কেউ আয়োজকদের ভুল ছবিটি ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এরপরও ব্যানারটি সরানো হয়নি। ওই ব্যানার ব্যবহার করেই পুরো অনুষ্ঠানটি শেষ করা হয়।
উকিল মুন্সির জন্ম নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার নূরপুর বোয়ালী গ্রামে ১৮৬৫ সালে। পরবর্তী সময়ে তিনি মোহনগঞ্জের জৈনপুর গ্রামে থিতু হন। সেখানেই ১৯৭৮ সালে প্রয়াত হন।
‘আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি’, ‘পূবালী বাতাসে’সহ বেশ কিছু গানের জন্য তিনি জনপ্রিয় হন। সংস্কৃতির ধারক-বাহক সংগঠন জেলা শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে উকিল মুন্সির ছবির জায়গায় আরেকজনের ছবি ব্যবহার অত্যন্ত দুঃখজনক বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সংস্কৃতিকর্মীরা।
লোকসংস্কৃতির গবেষক সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘আমাদের জানামতে উকিল মুন্সির কোনো ছবি নেই। তাকে নিয়ে যারা গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন তারাও কোনো ছবির সন্ধান দিতে পারেননি। ব্যানারে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার প্রয়াত বাউলশিল্পী কামাল পাশার ছবি হিসেবে পরিচিত, যদিও কামাল পাশারও সত্যিকারের কোনো ছবি নেই। এসব ক্ষেত্রে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’
নেত্রকোনায় সুফি কবি হিসেবে খ্যাত এনামূল হক পলাশ বলেন, ‘ব্যানারে এ ধরনের ভুল করা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে শিল্পকলা একাডেমি বিষয়টি সংশোধন করে নেবে বলে আশা করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সংস্কৃতি কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহার দাবি, বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল। ছবিটি গুগল করে নেওয়া হয়েছিল। এ ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে বলেছেন তিনি।
একই রকম ভাষ্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুদ জামানের। সুখবর ডটকমকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘উকিল মুন্সির কোনো ছবি নেই, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অনুষ্ঠান চলাকালে ফেসবুকে যখন দেখতে পাই এ নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করছেন, তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা উকিল মুন্সির পরিবারের দুই সদস্যের সঙ্গে কথা বলি।'
তিনি বলেন, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে বর্ণনা শুনে একজন শিল্পীকে দিয়ে একটি স্কেচ আঁকার ব্যবস্থা করব। তার পরিবার একমত হলে সেটি পরবর্তী সময়ে উকিল মুন্সির ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এটা আমি উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যানারে যে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, আশা করি ভবিষ্যতে এ রকম ভুলের অবকাশ আর থাকবে না।’
খবরটি শেয়ার করুন