ছবি: সংগৃহীত
নববধূ বিনোদিনী তার শাশুড়ি মেহেরুনের এক হাত ধরে রেখেছেন শক্ত করে। এদিকে ছোট্ট মেয়েকে ঘাড়ে নিয়েছেন সুবল। কমলা টুডুর কোলে খিলখিল করে হাসছে তার মেয়ে। তারা এগিয়ে চলেছেন শুভযাত্রায়।
ঘড়িতে বাজে বেলা ১১টা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের মোড়ে বেজে উঠল টামাক, মাদল, ঢাক-ঢোল, করতাল। চড়া গলায় স্লোগান উঠল, ‘রানি মা আছে? কোন সে রানি?’ জবাবে জনতার কণ্ঠে শোনা গেল ‘ইলা মিত্র, ইলা মিত্র, কৃষকের রানি ইলা মিত্র, বাঙালির রানি ইলা মিত্র’, ‘শুভ শুভ শুভ দিন, ইলা মিত্রের জন্মদিন’।
তেভাগা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী ইলা মিত্রের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আজ শনিবার (১৮ই অক্টোবর) চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি কৃষক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল এই শোভাযাত্রা। এতে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কৃষক। তারা এসেছেন নাচোলসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে।
ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে গিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে শেষ হয়। আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই বাদ্য বাজিয়ে কৃষকেরা নেচে নেন। তারপর জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো মূল আনুষ্ঠানিকতা।
সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক বঙ্গপাল সরদার। তিনি বললেন, ‘ইলা মিত্র আমাদের লড়াই করে বাঁচতে শিখিয়ে গেছেন। আমাদের লড়াই করে বাঁচতে হবে। সেই লড়াই এখনো করে যেতে হবে। আমরা কি আমাদের অধিকার পেয়েছি? পাইনি। এখনো সেই লড়াই করেই যেতে হবে।’
ইলা মিত্রের জীবন ও সংগ্রাম সম্পর্কে তুলে ধরে বঙ্গপাল সরদার বলেন, জমিদার পরিবারের গৃহবধূ হয়ে তিনি নাচোলের কৃষকের তেভাগা আন্দোলনের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেটি মনে রাখতে হবে। এই জন্মশতবার্ষিকী আয়োজনে বাঙালি ও আদিবাসী যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
এরপর তেভাগা আন্দোলনের বিখ্যাত গান ‘হেইসা মালো ধান হো...’ গানের মধ্য দিয়ে ইলা মিত্রকে নিয়ে গীতি-আলেখ্য উপস্থাপন করেন কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীরা। রামিজ আহমেদের নির্দেশনায় এতে অংশ নেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ফিল্টিপাড়া মহল্লার কোল শিক্ষার্থী, শিক্ষক নির্মল কোল ও সীমার বাহা কোল শিল্পীগোষ্ঠীর নেত্রী কল্পনা মুর্মু।
খবরটি শেয়ার করুন