ছবি: সংগৃহীত
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। একসঙ্গে ৯ জন শীর্ষস্থানীয় জেনারেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এই ৯ জনই গুরুতর আর্থিক অপরাধে অভিযুক্ত। তাদের সামরিক বাহিনী থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ছিলেন থ্রি-স্টার জেনারেল এবং সিসিপির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ৯ জন ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এবং অনেক বড় অঙ্কের অর্থের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুদায়িত্বে অনিয়মে’ সন্দেহভাজন। তাদের এখন সামরিক আদালতের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে দল ও সামরিক বাহিনীর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
যদিও ক্ষমতাসীন দল এটিকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান হিসেবে দেখাচ্ছে। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এর পেছনে রাজনৈতিক শুদ্ধি বা ক্ষমতা সুসংহত করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ২০শে অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগে এই বরখাস্তের ঘটনা ঘটল। এই অধিবেশনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নতুন সদস্য নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
বরখাস্ত করা ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন হে ওয়েইডং, তিনি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পরে চীনের সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সিসিপির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা পলিটব্যুরোরও সদস্য ছিলেন। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি থেকেই সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বে শুদ্ধি অভিযানের জল্পনা শুরু হয়েছিল।
বরখাস্তকৃত ৯ শীর্ষ কর্মকর্তা হলেন: হে ওয়েইডং—কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান; মিয়াও হুয়া—সিএমসির রাজনৈতিক কর্ম বিভাগের পরিচালক; হে হংজুন—সিএমসির রাজনৈতিক কর্ম বিভাগের কার্যনির্বাহী উপপরিচালক; ওয়াং শিউবিন—সিএমসির যৌথ অভিযান কমান্ড কেন্দ্রের কার্যনির্বাহী উপপরিচালক; লিন জিয়াংইয়াং—ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার; কিন শুতোং—সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার; ইউয়ান হুয়াজি—নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার; ওয়াং হুওবিন—রকেট ফোর্সের কমান্ডার; ওয়াং চুননিং—সশস্ত্র পুলিশ ফোর্সের কমান্ডার।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ফেলো নিল থমাস বিবিসিকে বলেন, সি চিনপিংয়ের এই শুদ্ধি অভিযান আসলে ক্ষমতা প্রদর্শন ও দলকে ‘শুদ্ধ, সুশৃঙ্খল এবং কার্যকর সংস্থা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কৌশল।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের কঠোর শুদ্ধি অভিযান নতুন উদ্যোগগুলোকে স্থবির করে দিতে পারে এবং প্রশাসনকে আরও অনমনীয় করে তুলতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপ পুরো ব্যবস্থার মধ্যে সতর্কতা বাড়ালেও একই সঙ্গে এটিকে ‘আরও ভঙ্গুর’ করে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকেরা এখন আগামী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। তাদের মতে, যদি উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, তবে তা হবে এই শুদ্ধি অভিযানের ব্যাপকতা সম্পর্কে সবচেয়ে স্পষ্ট সরকারি ইঙ্গিত।
খবরটি শেয়ার করুন