রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে: সরকারের বিবৃতি *** তারেক রহমানের বিবিসির সাক্ষাৎকারে ৮০ ভাগ নেটিজেনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া *** ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তপশিল: সিইসি *** ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে এনসিপি *** চীন সরকারের ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান, শীর্ষস্থানীয় ৯ জেনারেল বরখাস্ত *** ঢাকামুখী ৮ ফ্লাইট গেল চট্টগ্রাম ও কলকাতায় *** জুলাই সনদে কাল স্বাক্ষর করবে গণফোরাম *** যারা বলেন এবার ‘জামায়াতের শাসন দেখি’, তাদের উদ্দেশ্যে যা বললেন আনু মুহাম্মদ *** ‘রক্ত দিতে হলে সামনের সারিতে, ক্ষমতার প্রশ্নে খুঁজে পাওয়া যাবে না’ *** ‘দোসর’ বলার জন্য বিএনপির সালাহউদ্দিনকে ক্ষমা চাইতে হবে: নাহিদ

এক পায়ে ভর দিয়ে জীবনযুদ্ধে আরাফাত

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, ১১ই জুলাই ২০২৫

#

ক্রাচে ভর দিয়ে চলছেন আরাফাত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে এক পা হারিয়েছেন পাবনার আরাফাত হোসেন। এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয়েছে। এতে খুশি হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এক পা নিয়েই তাকে নামতে হয়েছে জীবনযুদ্ধে। ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশেহারা এখন তার পরিবার।

পাবনা সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও কোমেলা খাতুন দম্পতির সন্তান আরাফাত হোসেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এক ব্যবসায়ীর প্রাইভেট কারচালক হিসেবে চাকরি নেন ঢাকার উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে। ওই বছরের ১৮ই জুলাই সকাল ৯টার দিকে আন্দোলনরত ছাত্ররা উত্তরার প্রধান সড়কে জমায়েত হন। সেই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি।

আলাপকালে আরাফাত বলেন, ‘সারাদিন থেমে থেমে আন্দোলন চলে। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। কখন যে আমার বাম পায়ে একটা গুলি লেগেছিল টেরই পাইনি। পরে দৌড়াতে গিয়ে দেখি আমার বাম পা ওঠে না। তাকিয়ে দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে পা।’

বলেন, ‘সেখান থেকে ছাত্র ভাইদের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করে আমার খালাতো ভাই হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভর্তির জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল আর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে। শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা যায়নি গুলিবিদ্ধ বাম পা। পরে চিকিৎসক জানান আমার পায়ের পেশি মারা গেছে, রাখা সম্ভব নয়। তারপর ২১শে জুলাই চিকিৎসক অপারেশন করে আমার পা কেটে দেয়। সেখানে ২১শে আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরপর ব্র্যাক থেকে আমাকে আর্টিফিশিয়াল পা লাগিয়ে দেওয়া হয়।’

বাড়ি ফিরে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় একটি মুদি দোকান দিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছেন আরাফাত। ভেবেছিলেন বাবা-মা, ভাইবোনসহ পুরো পরিবারের দায়িত্ব সামলাবেন। তবে সেই স্বপ্ন এখন তার কাছে দুঃস্বপ্ন। আরাফাত জানান, ক্রাচে ভর দিয়ে এত দায়িত্ব সামাল দিতে পারছেন না তিনি।

আরাফাতের মা কোমেলা খাতুন বলেন, ‘একটা পা ছাড়া একটা মানুষ কতটা শান্তিতে চলাফেরা করতে পারে বলেন? ছেলেটা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে যায়, তখন বুকটা ফেটে যায়। মা হিসেবে দেখতে পারি না।’

আরাফাতের বাবা কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সামান্য কিছু জমি আছে, সেগুলো কিছু চাষাবাদ করি। বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো কাজকামও করতে পারি না। ছেলেটার মুদি দোকান থেকেই-বা কয় টাকা কামাই হয়। তাই দিয়ে নুন ভাত খেয়ে চলতে হচ্ছে।’

আরাফাতের স্ত্রী তানজিলা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী দেশের জন্য পা হারিয়েছে, এটা আমার কাছে গর্বের। অন্যদিকে তা কষ্টেরও। এখন আমাদের জীবন কীভাবে চলবে! গ্রামের মধ্যে মুদি দোকানে খুব একটা বেচাকেনাও হয় না। আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে, তাকে কীভাবে মানুষ করব—এই চিন্তায় ঘুম হয় না।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250