রবিবার, ১লা জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক জোটসঙ্গীকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল বিএনপির নেতা হাবিব

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:৫৬ অপরাহ্ন, ১৮ই মে ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের মিত্র ও নির্বাচনের সঙ্গী বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে 'প্রকাশ্য দূরত্ব' বেশি দেখা যাচ্ছে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে। 'দলীয় আদর্শ আর কৌশলের রাজনীতি' দল দু'টির মধ্যে 'দূরত্ব' বাড়াচ্ছে বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের অভিমত। সাম্প্রতিক সময়ে দু’দলের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে যোগাযোগের 'কিছুটা ঘাটতিও' তৈরি হয়েছে বলে দল দু'টির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র সুখবর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।

৫ই আগস্টের পর থেকে রাজনীতির মাঠে নানা বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে 'স্পষ্ট মতবিরোধ' দেখা দেয়। দু’দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে তা ফুটে উঠছে। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, সংবিধান সংস্কার, সরকারের সংস্কার প্রস্তাব, নির্বাচনের দিনক্ষণ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় লোকের বদলি, পদায়ন, নিয়োগ ও দখল-চাঁদাবাজির মতো বিষয় নিয়ে চলছে 'বাগ্‌যুদ্ধ'। 

সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের 'বাগ্‌যুদ্ধ' প্রায় সময় দৃশ্যমান হয়ে উঠে। একদলের বিরুদ্ধে আরেক দলের নেতা বক্তব্য দিয়ে, বা বক্তব্যের জবাব দিয়ে ভাইরাল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সাবেক জোটসঙ্গী জামায়াতের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের দেওয়া বক্তব্য এবার ভাইরাল হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও 'চুলচেরা বিশ্লেষণ' চলছে।

আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন হাবিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে তখন দায়ের হয় হয়রানিমূলক মামলা। তাকে কারাভোগও করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতেও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোতে তিনি বিএনপির পক্ষে সাহসী কণ্ঠস্বর ছিলেন।  একটা পর্যায় থেকে তাকে টকশোতে আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ না জানাতে তখন সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে টিভি চ্যানেলগুলোতে নির্দেশ আসে বলে অভিযোগ আছে।

পাবনার আটঘরিয়ায় 'জামায়াতের কোনো মুয়াজ্জিন আজান দিতে পারবেন না এবং কোনো ইমাম নামাজ পড়াতে পারবেন না' বলে প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি জামায়াতকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী রগকাটা গ্রুপ’ ও ‘পাকিস্তানের দোসর’ বলেও আখ্যায়িত করেন।

গতকাল শনিবার (১৭ই মে) বিকেলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আটঘরিয়ায় জামায়াত-বিএনপি সংঘর্ষে আহত বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এ বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল (আলোচিত) হয়। সুখবরের পক্ষ থেকে ওই ভিডিও'র সত্যতা যাচাই করা হয়নি। তবে জাতীয় কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে, ভিডিওটি হাবিবুর রহমান হাবিবের।

ওই ভিডিওতে হাবিবুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘দল যেটা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তো নেবেই। তার সাথে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আমি আজকে বলব, ভবিষ্যৎ তো পরে, এখন থেকে আটঘরিয়ায় কোনো মসজিদে জামায়াতের কোনো মুয়াজ্জিন আজান দিতে পারবেন না, জামায়াতের কোনো ইমাম ইমামতি করতে পারবেন না।'

গত শুক্রবার (১৬ই মে) পাবনার দেবোত্তর বাজার জামে মসজিদে জামায়াতের কারণে মানুষ জুমার নামাজ পড়তে পারেননি দাবি করে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘তালা দিয়ে পালিয়েছে। কতটা ন্যক্কারজনক ঘটনা।’

তিনি আরও বলেন, 'জামায়াত মিথ্যা কথা বলে। এদের পেছনে নামাজ হয় না। এরা স্বাধীনতাবিরোধী রগকাটা গ্রুপ। এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। পাকিস্তানের দোসর ছিল। তাই আটঘরিয়াবাসীকে আহ্বান জানাব, এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।’

জামায়াতের কার্যালয়ে কোরআন ও হাদিস পোড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা কোরআন পোড়াননি। তারা (জামায়াত) নিজেরাই কোরআন পুড়িয়েছে। বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কোরআন পোড়াতে পারেন না। এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। যদি বিএনপির নেতাকর্মীদের কোরআন পোড়ানোর ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেন, তাহলে সমস্ত দায়-দায়িত্ব আমি নেব। আর আমাদের যে একশ মোটরসাইকেল ভাঙছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাদের।’

এ বিষয়ে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডলসহ একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব। নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্ব অগ্রগণ্য। তার নাম বলতেই এখনও অনেকের মনে পড়ে স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক নব্বইয়ের সেই তুখোড় ছাত্রনেতার কথা।

তার নেতৃত্ব, সাহস ও দক্ষতার কারণে অনেকে মনে করেছিলেন, তিনি পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন। বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে তিনি যোগ দেন বিএনপির রাজনীতিতে।

এইচ.এস/

হাবিবুর রহমান হাবিব

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন