ইহুদি উপাসনালয়ে হামলাকারী জিহাদ আল-শামি। ছবি: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস
গতকাল বৃহস্পতিবার (২রা অক্টোবর) ছিল ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়োম কিপুর’। এ দিন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটান জিহাদ আল-শামি। ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গাড়ি চালিয়ে ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালান। এতে দুজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলেই পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে।
আজ শুক্রবার (৩রা অক্টোবর) ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, জিহাদ আল-শামি সিরিয়ার অভিবাসী পরিবারের সন্তান। তিনি ছোটবেলায় যুক্তরাজ্যে আসেন এবং ২০০৬ সালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান। তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নিরাপত্তাজনিত কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজ জিহাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ‘অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ’ বলে নিন্দা জানানো হয়। জিহাদের বাবা ফারাজ আল-শামি লেখেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্য ও বিদেশে থাকা আল-শামি পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষদের টার্গেট করে—এ ধরনের নৃশংসতায় আমরা স্তম্ভিত।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা এই হামলার সঙ্গে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করছি এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
প্রতিবেশীদের ভাষ্যে জিহাদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি কখনো ঐতিহ্যবাহী সিরিয়ার পোশাক পরতেন, আবার কখনো পাশ্চাত্য পোশাকে দেখা যেত তাকে। অনেক সময় তাকে বাড়ির উঠানে ভারোত্তলন করতেও দেখা গেছে। তার বাবার ফেসবুকে একটি ছবিতে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবরে জিহাদ এক নবজাতককে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার বাবা ক্যাপশনে লিখেছিলেন—‘দারুণ, স্বাগতম নাতি।’
জিহাদের বাবা ফারাজ আল-শামি একজন চিকিৎসক। তিনি সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় কাজ করেছেন। তিনি নিয়মিত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে মতামত প্রকাশ করে থাকেন। গত বছর হামাসের হামলা প্রসঙ্গে তিনি ইসরায়েল টিকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি সিরিয়ার রাজনৈতিক বিভাজন ও গৃহযুদ্ধ নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।
ম্যানচেস্টারে ১৯৯৬ সালের আলোচিত বোমা হামলার সময়ও শহরে ছিলেন বলে এক পোস্টে উল্লেখ করেছেন ফারাজ আল-শামি। এ ছাড়া তিনি খ্রিষ্টান সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিরোধিতা এবং সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনাও করেছিলেন।
তবে তার ছেলে জিহাদের এই নৃশংস কর্মকাণ্ডে পরিবার যেমন বিস্মিত, তেমনি দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কর্তৃপক্ষ এখন তদন্ত করছে, জিহাদের সহিংস প্রবণতা কীভাবে আগে নজরে আসেনি।
খবরটি শেয়ার করুন