ছবি: সংগৃহীত
১২ই মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। ১৮২০ সালের এ দিনে আধুনিক নার্সিং সেবার পথপ্রদর্শক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম। এ দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে সেই মহীয়সী নারীর কর্মকে সম্মান জানানো হয়। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা, সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস’ (আইসিএন) ১৯৬৫ সাল থেকে দিনটি উদযাপন করে আসছে। প্রতি বছর আইসিএন আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে কিট প্রস্তুত ও বিতরণ করে। কিটে সর্বত্র নার্সদের ব্যবহারের জন্য শিক্ষাগত ও উন্মুক্ত তথ্য উপকরণ থাকে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হয়। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, নার্সিং পেশার উন্নতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র হিসাব অনুযায়ী হাসপাতালের শয্যা, চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হতে হবে ১:৩। অর্থাৎ, একজন চিকিৎসক অনুপাতে অন্তত তিনজন নার্স প্রয়োজন।
যেখানে বলা হয়েছে, একজন চিকিৎসকের পাশাপাশি তিনজন পেশাদার নার্স প্রয়োজন, সেখানে বাংলাদেশের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১ লাখ ৩৪ হাজার চিকিৎসকের বিপরীতে নার্স প্রয়োজন ছিল ৪ লাখ ২ হাজার। বর্তমানে ১ লাখ নিবন্ধিত নার্স রয়েছেন। এ হিসাবে দেশে ২ লাখ ৯২ হাজার নার্স সংকট রয়েছে।
এমন বাস্তবতায় রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবার স্বাভাবিক কার্যক্রম। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার এত বছরেও যোগ্যতা অনুযায়ী নার্স পেশাজীবীরা তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি ও পদমর্যাদা পায়নি। মাস্টার্স, এমপিএইচ ও পিএইচডিসহ দেশ-বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী সহস্রাধিক নার্স রয়েছেন।
এ দেশে তাদের পদায়নের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। একজন নার্স নিয়ম অনুযায়ী ধাপে ধাপে তাদের পদোন্নতি পাওয়ার কথা। শুরুতে যে পদে নিয়োগ পান, অর্থাৎ স্টাফ নার্স হিসেবে নিয়োগ পান এবং ওই পদেই ৯০ ভাগ নার্স অবসরে যান। স্বাস্থ্যখাতে নার্সরা পদোন্নতি নিয়ে চরম বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘকাল যাবত এ পেশায় নিয়োজিত নার্সরা পদোন্নতি-বঞ্চিতই রয়ে গেছেন।
আমেরিকার নিউইয়র্কভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থার ‘সেজ’-এর ‘পলিসি, পলিটিকস অ্যান্ড নার্সিং প্র্যাকটিস’ সাময়িকীতে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় নার্সিং পেশা পিছিয়ে থাকা বা অবহেলার শিকার হওয়ার কারণ তুলে ধরে বলা হয়, ‘সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অসম্মান থেকে এ পেশার প্রতি একধরনের অশ্রদ্ধা লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে নার্সিং পেশাকে নিম্নমানের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের এ পেশায় আসতে দেখা গেছে।’
এমনকি এ পেশাকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে দেখার প্রবণতাও আছে দেশে। অনেকে মনে করেন, ‘নোংরা’ শরীর স্পর্শ করা ভালো মানুষের কাজ না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, মেয়েদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করা বা অন্য লিঙ্গের মানুষের শরীর স্পর্শ করা ঠিক না। এসব কারণে এ পেশা সমাজে সম্মান অর্জনে বাধা পেয়েছে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে নার্সিংকে মহান পেশা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।
নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। একজন রোগীর সুস্থতার জন্য নার্সের সেবার গুরুত্ব অপরিসীম। চিকিৎসকরা রোগীকে শুধু ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চলে যান। বাকি সিংহভাগ সময় নার্সের তত্ত্বাবধানে রোগী থাকেন। নার্সরা তাদের আন্তরিক সেবা দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। তাই নার্সকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।
এইচ.এস/