ছবি : সংগৃহীত
নানান কারণে অনেকের মেজাজ সারাদিন খিটখিটে হয়ে থাকে। খিটখিটে মেজাজ একটি খারাপ অভ্যাস। এটা কখনো কখনো শারীরিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই ত্রুটি থেকে বের হয়ে আসতে পথ দেখিয়েছে ইসলাম। কারণ এই বদভ্যাসটির কারণে পারিবারিক সমস্যা থেকে শুরু করে সম্পর্ক পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। নানারকম ক্ষতি হয়ে যায়।
মানুষের মধ্যে যারা কঠিন রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, মহান আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। আল্লাহ বলেন,
‘‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আর আল্লাহ মুহসিনদেরকে ভালবাসেন।’’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)
খিটখিটে মেজাজ থেকে বাঁচতে নিচের আমল ও দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে।
প্রচণ্ড রাগে আউজুবিল্লাহ পড়া
নবীজির একটি ঘটনা পাওয়া যায়। দুই ব্যক্তি রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসে পরস্পর গালাগাল করছিলেন। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘‘আমি একটি বাক্য জানি সে যদি তা পড়ে তাহলে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। সে বাক্যটি হলো- أعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’’ অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। (মুসলিম: ৬৮১২)
আরো পড়ুন : মহররম মাসের করণীয় ও বর্জনীয়
রাগ উঠলে চুপ হয়ে যাওয়া
রাগ মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। তবে রাগের সময় চুপ থাকার কথাটি প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার বলেছেন। চুপ থাকলে রাগ দমন হয়। রাগের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো; কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৭৮৬)
রাগ আসলে শুয়ে পড়া
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’’ (আবু দাউদ: ৪৭৮৪)
রাগ না কমলে অজু করা
কোনোভাবেই যদি আপনার রাগ কমাতে না পারেন তাহলে অজু করুন। অজু করলে রাগ কমে যায়। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘‘নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয়ই পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’’ (আবু দাউদ: ৪৭৮৬)
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার অনেক ফজিলত মনে রাখা
কঠিন রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাকে প্রকৃত বীরত্ব বলে ঘোষণা দিয়ে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘সেই ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’’ (বুখারি: ৬৮০৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (স.) বলেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)।
এস/ আই.কে.জে
খবরটি শেয়ার করুন