প্রতীকি ছবি - সংগৃহীত
শব্দ দূষণ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি দিন দিন আরো বেড়েই চলেছে। তবে ঢাকাবাসী শব্দ দূষণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। রাতের গভীরেও উচ্চ শব্দের আওয়াজ থেকে মুক্ত নয়। এতে ঘুমেরও বিঘ্ন ঘটে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় নিরাপদ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক ও যানজটপ্রবণ এলাকায় ৭০ ডেসিবেল। অর্থাৎ শব্দ ৭৫ ডেসিবল অতিক্রম করলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। আর ১২০ ডেসিবলের উপরে মারাত্মক হয়ে উঠে। সেখানে ঢাকার গড় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবল। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ঢাকা কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে।
ঢাকা শহর হলো- বিশ্বের সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাজধানীর বেশির ভাগ মানুষই শব্দ দূষণের শিকার। যখন অপ্রয়োজনীয় শব্দ মানুষের সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে বিরক্তি ঘটায় এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে, সেটাই হচ্ছে- শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণের উৎসগুলো ইতিমধ্যে চিহ্নিত- যানজট, গাড়ির অপ্রয়োজনীয় হর্ন, নির্মাণ কাজ, শিল্প-কলকারখানা, মিছিল-সমাবেশ থেকে তীব্র শব্দ তৈরি হয়। এছাড়া সড়ক কিংবা মহাসড়কে বিশৃ্খলার কারণেও শব্দ দূষণ হচ্ছে। একই সড়কে চলছে বাস, ট্রাক, জিপ, রিকশা, মোটরসাইকেল, সিনজি চালিত অটোরিকশা। এগুলো সব দৃশ্যমান শব্দ দূষণের উৎস।
শব্দ দূষণের ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে থাকে। মানুষের কানের নার্ভ ও রিসেপ্টর সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাতে থাকে। মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। ৮০-এর ওপরে গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোনো ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে, তাহলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ১২০ ডেসিবল শব্দ সঙ্গে সঙ্গে কান নষ্ট করে দিতে পারে।
এছাড়া হার্টে সমস্যা, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস সমস্যা, শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। শব্দ দূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্মরণশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে।
ঢাকা শহরের মগবাজার-বাংলামোটর, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, গুলিস্তান এলাকায় শব্দ দূষণ বেশি হয়। এই সব স্থান রাজধানীর খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এখানে মানুষের প্রচুর জটলা থাকে। এখানে শ্রমজীবী মানুষের আনাগোনার কারণে বাস, রিকশা, জিপ, অটোরিকশার জ্যাম থাকে। যার কারণে প্রচুর শব্দ দূষণ হয়। যা অসহনীয় ও বিরক্তিকর।
ঢাকা শহরে প্রায় এক কোটিরও বেশি মানুষ শব্দ দূষণের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। অন্য এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রায় ৯১ শতাংশ মানুষ দূষণের সমস্যায় আছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পরিকল্পিত নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন। বেপরোয়া হর্ন ব্যবহারে সচেতনতা, রিকশা ও বাইসাইকেলের জন্য আলাদা লেন। যাত্রীদের ট্রাফিক আইন মেনে ফুট ওভার ব্রিজ কিংবা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে বাধ্য করতে হবে। তাহলেই কেবল শব্দ দূষণের হাত থেকে ঢাকাবাসী মুক্তি পাবে।
আই.কে.জে/