প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ব্রিটেনের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে লন্ডনে হওয়া এক বিক্ষোভ থেকে প্রায় ৫০০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত জুলাইয়ে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে ব্রিটেন সরকার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। সংগঠনটির সমর্থনে আয়োজিত নীরবতা পালন অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীদের আটক শুরু করে পুলিশ।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা যায়, ফুটপাতে নীরবে বসে থাকা বিক্ষোভকারীদের আটক করতে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেন ডজনখানেক পুলিশ সদস্য। বেলা ১টার পর থেকে বিক্ষোভকারীদের আটক করতে থাকে। সে সময় বিক্ষোভকারীরা প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে সাইনবোর্ড লিখছিলেন। প্রায় এক হাজার মানুষ মাটিতে বসে হাতে সাইনবোর্ড ধরে ছিলেন বলে জানান আয়োজকেরা।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল শনিবার (৪ঠা অক্টোবর) সেন্ট্রাল লন্ডনে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরিচালিত অভিযানে মোট ৪৯২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮৮ জনকে আটক করা হয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠনকে সমর্থনের অভিযোগে। বাকি কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে মাতাল ও বিশৃঙ্খল আচরণ, সাধারণ হামলা, জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুরোনো মামলার কারণে।
পুলিশ আরও জানায়, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে ব্যানার ঝোলানোর অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ১৮ এবং সবচেয়ে বেশি বয়সী ৮৯ বছর। শনিবার রাতে পর্যন্ত ২৯৭ জন হেফাজতে ছিলেন, বাকিদের জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই বিক্ষোভের আয়োজন করে ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস নামে একটি সংগঠন। তারা আগেই জানিয়েছিল, এবার আগের তুলনায় উপস্থিতি বেশি হবে। তাদের ধারণা ছিল দেড় হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেবে। এতে ১৯৬১ সালে একই স্থানে হওয়া পারমাণবিক বিরোধী বিক্ষোভে হওয়া আটকের রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে।
অন্যদিকে, ম্যানচেস্টারে জিএম ফ্রেন্ডস অব প্যালেস্টাইন নামের একটি সংগঠন গাজা যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ করে, যেখানে শত শত মানুষ অংশ নেয়। সংগঠনটির কর্মী জন নিকলসন বলেন, শহরের সিনাগগে প্রাণঘাতী হামলার পর থেকে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জন নিকলসন বলেন, ‘গণহত্যা এখনো বন্ধ হয়নি, তাহলে আমরা কেন থামব? যদি বোমাবর্ষণ এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকত, যদি গাজায় এক সপ্তাহের জন্য খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ করতে দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো আমরাও এক সপ্তাহ বিরতি নিতাম। কিন্তু তা হয়নি, তাই আমরাও থামব না।’
কিয়ার স্টারমার বিক্ষোভকারীদের ‘ব্রিটিশ ইহুদিদের শোকের প্রতি সম্মান জানাতে’ এটি বাতিল করার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও এই বিক্ষোভ চলতে থাকে। কারণ, ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে বৃহস্পতিবারের সন্ত্রাসী হামলায় দুজন নিহত হওয়ার পর ইহুদি ব্যক্তিরা এই পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত নির্বোধ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
কিয়ার স্টার্মারের মন্তব্যের জবাবে ডিফেন্ড আওয়ার জুরিসের সমর্থক জোয়ে কোহেন বলেন, ম্যানচেস্টারে ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাকে অজুহাত করে আজকের সমাবেশ বাতিল করার দাবি করা হচ্ছে, যা ভুলভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে সব ইহুদির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। বিশ্বের ইহুদি জনগণ ইসরায়েলের অপরাধের দায় বহন করে না এবং অনেক ইহুদি আছেন, যারা ইসরায়েলি রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন না। আজকের সমাবেশ বাতিল করলে এই বিপজ্জনক বর্ণনাই জোরদার হতো, যা ইহুদিবিদ্বেষকে উসকে দেয়।’
এদিকে, দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের অংশ হিসেবে ইতালি এবং স্পেনের লাখ লাখ মানুষ রোম, বার্সেলোনা ও মাদ্রিদে মিছিল করেছে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন