ছবি : সংগৃহীত
বিসিবি সভাপতির পদ থেকে নাজমুল হাসান পাপন সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের ক্রিকেট পাড়ায় এমন খবর চাউর হওয়ার পরই আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। এবার কে হচ্ছেন বিসিবি সভাপতি? এই তালিকায় এসেছে অনেকের নাম। অন্যদিকে বর্তমানে যারা বোর্ড পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তাদের মধ্যেও চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে কেউই গণমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি। সবার মধ্যে রয়েছে সংশয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরাগভাজন হতে চান না তারা।
বেশ কয়েকজন পরিচালক জানান, সকলেই কাজ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। তারা কিছু জায়গায় সংস্কারের পক্ষেও মত দিয়েছেন। একটি সূত্র বলছে, যে কোনো সময় বোর্ডের হাতে এসে পৌঁছাবে বিসিবি সভাপতির পদত্যাগপত্র। তবে দেশের বাইরে থাকা কয়েকজন পরিচালক এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা চান না বিসিবি সভাপতি পদত্যাগ করুন। এমনকি তারা নিজেরাও পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই তালিকায় কারা রয়েছেন, সে সম্পর্কে বলতে রাজি হয়নি সূত্র।
আবার বর্তমানে যারা জনসম্মুখে দেশে রয়েছেন তারা শুরু থেকেই ইতিবাচক কথা বলে আসছেন। তাদের মধ্য থেকেই একজন জানিয়েছিলেন পাপনের পদত্যাগের বিষয়টি। এমনকি সে সময়ে এটিও জানা গিয়েছিল, প্রয়োজনে পরিচালকের পদ থেকে আরও অনেকে পদত্যাগ করতে রাজি আছেন। গেল ১১ই আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন। তার সঙ্গে ছিলেন বিসিবির সাত পরিচালক। তারা হলেন-কাজী এনাম আহমেদ, মোহাম্মদ জালাল ইউনুস, মাহবুব আনাম, খালেদ মাহমুদ সুজন, আকরাম খান, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও ইফতেখার রহমান মিঠু। এর বাইরে আরও কয়েকজন পরিচালক দেশে অবস্থান করলেও বিসিবিতে আসেননি।
অন্যদিকে সভাপতি পাপন বাদে আরও ১৩ জনের খবর এখনো মেলেনি। তারা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, টানা তিন সভায় কেউ অনুপস্থিত থাকলে তার পরিচালক পদ বাতিল হবে। এক্ষেত্রে দেশের বাইরে যারা আছেন, তারা সভায় অংশ না নিলে এক সময় পদ হারাবেন। তাতে কয়েক মাসের সময় ক্ষেপণ হবে কেবল।
আরো পড়ুন : দেশের প্রথম স্পোর্টস ইনস্টিটিউট তৈরির ঘোষণা ক্রীড়া উপদেষ্টার
এই মুহূর্তে বিসিবির সভাপতি হিসেবে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, ‘বোর্ডে কাজ করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমি সেখানে নেতিবাচক কিছু বলিনি। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সেসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যদি আমি কাজের ভালো পরিবেশ পাই, তাহলে কাজ করতে আমার অমত নেই।’
আহমেদ ছাড়াও খালেদ মাসুদ পাইলট, সৈয়দ আশরাফুল হক, নাজমুল আবেদীন ফাহিম, আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ অনেকের নাম এসেছে। তবে তারা কেউই বোর্ড পরিচালক নন। এই মুহূর্তে পরিচালক হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার উপায় রয়েছে, সেটি হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মাধ্যমে। বর্তমান বোর্ডে মোহাম্মদ জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি এনএসসির মনোনীত পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এই দুই জনের বদলে ফারুক আহমেদ ও খালেদ মাসুদ পাইলটকে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কিংবা অন্য কোনো দুজনকে।
খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছেন, ‘যদি আমি কাজ করার সুযোগ পাই তাহলে যত অনিয়ম রয়েছে সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা করব। যদি না পারি তাহলে দায়িত্ব থেকে সরে যাব, ঐ চেয়ারে বসব না। নীতিগতভাবে সবসময় মাথা উঁচু করে চলেছি। যদি দায়িত্ব পাই তারপরে আলো নিয়ে আসতে পারলে থাকব নাহলে থাকব না। তবে যাই হোক, বাংলাদেশের ক্রিকেট জন্য যা ভালো হয় সেটি আমি চাই। ব্যক্তি পাইলটের সুবিধা নেওয়ার জন্য আমি কোনো পদপদবি চাই না।’
এদিকে বিসিবি সভাপতির পদ থেকে নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করলেও পরিচালক হিসেবে তিনি থাকবেন বলে জানা গেছে। অর্থাৎ সভাপতি হিসেবে না থেকে নিয়মিত পরিচালক হিসেবে তিনি বর্তমান বোর্ডে থাকবেন। কয়েক দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবেও বলে জানা গেছে।
গতকাল ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, 'আমাদের প্রত্যেক ফেডারেশনে যে গঠনতন্ত্র আছে সেগুলো যেন গণতান্ত্রিক হয়, একনায়কতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকে। সেগুলোও প্রভাবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। যে খেলার সঙ্গে যিনি সংযুক্ত এবং কাজ করে আসছেন, তাদের দিয়েই ফেডারেশন ঢেলে সাজাবো। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সর্বোচ্চ কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো।'
এস/ আই.কে.জে/