ছবি - সংগৃহীত
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দিয়েছে, দেশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতিবছর ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে (যদিও এবার ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে হবে)। এখন দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতিবছর হিসাব দিতে হবে। এই পটভূমিতে চলতি বছরের সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ক্যাডার/নন-ক্যাডার (নবম থেকে তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন। অন্যদিকে গেজেটেড/নন-গেজেটেট কর্মকর্তা/কর্মচারীরা (দশম থেকে বিশতম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃঢ় ঘোষণা— সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব দাখিল করা বাধ্যতামূলক। এমনকি ভুল তথ্য দিলে বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তি হবে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের শাস্তি হবে—লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড। লঘুদণ্ড হচ্ছে—তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা; কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারি আদেশ অমান্য করার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ বেতন বা আনুতোষিক থেকে আদায় করা; বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ। আর গুরুদণ্ড হলো—নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিত করা কিংবা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান।
দুর্নীতি উন্নয়ন বা অগ্রগতির জন্য প্রধান প্রতিবন্ধক। দুর্নীতির লাগাম টানতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতার বিকল্প নেই। বিভিন্ন সরকারের সময় দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ছিল না। বরং তাদেরকে নানাভাবে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ নিয়ে চরম অসন্তোষ আছে। কারণ এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সরকারি চাকরি মানেই যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। বছর ঘুরতেই অস্বাভাবিকভাবে তাদের সম্পদ বাড়তে থাকে। জীবনাচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন আসে।
চাকরিবিধি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের বিবরণ জমা দেয়ার কথা পাঁচ বছর পর পর। সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাদের কোনো ব্যবসা করার সুযোগ নেই। কিন্তু এসব নিয়মকানুন কাগজেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেজন্য সরকারি চাকরি আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে উঠেছে। পূর্বের সরকারগুলো অবৈধ সম্পদ রোধে কঠোরতার কথা বললেও বাস্তবে প্রতিফলন দেখা যায়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেছেন, বছর বছর সম্পদ বিবরণীর হিসাব দেয়া মানেই হলো কর্মচারীদের সম্পদের লাগাম টানা। এবারের সরকারের দুর্নীতির লাগাম টানার ঘোষণার পরিণতি কী হবে—সেটা সময়ই বলে দেবে।
আই.কে.জে/