ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি দুই জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজার দুর্ভিক্ষের চিত্র স্পষ্ট ওই ভিডিও দুটিতে। দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে হাড়-জিরজিরে হয়ে পড়েছে জিম্মিদের শরীর। হাঁটাচলা, এমনকি উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তিও নেই তাদের।
গত বৃহস্পতিবার (৩১শে জুলাই) এই ভিডিওগুলো প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। অনাহারে হাড্ডিসার হয়ে গাজার দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু যাদের নাড়াতে পারেনি, এই দুই ইসরায়েলির জীর্ণ শরীর দেখে যেন রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন তারা।
একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ, শোকস্তব্ধ আর ক্রুদ্ধ বিশ্ব মোড়ল পশ্চিমা নেতারা। একের পর এক বিবৃতি দিয়ে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন তারা। তবে, ঠিক কার ওপর কেন ক্ষুব্ধ তারা, তা নিশ্চিত হতে পারছেন না অনেকেই। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশকে ‘বীভৎস’ আখ্যা দিয়েছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। তার ভাষ্য—প্রচারণার জন্য জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস, যা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। অবিলম্বে বিনা শর্তে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে।
ভিডিওগুলো দেখে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মের্ৎস। তিনি বলেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য ‘জিম্মি মুক্তি’ হতে হবে প্রধান শর্ত। যদিও হামাস কখনো জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়নি, তারপরও তিনি কেন এ কথা বললেন তা পরিষ্কার নয়।
এদিকে, এই ভিডিও প্রকাশকে হামাসের চরম নিষ্ঠুরতার উদাহরণ বলে নিন্দা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এ সময় তিনি আরও বলেন, সব জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং গাজার বেসামরিক মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্যারিস। এ সময় তিনি সংকট নিরসনে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ওপর আবারও জোর দেন।
উল্লেখ্য, হামাস প্রকাশিত ওই ভিডিওতে ব্রাসলাভস্কি ও ডেভিড নামে দুই জিম্মিকে দেখা যায়। তাদের দুজনেরই বয়স ২০-এর কোঠায়। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে তাদের জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। প্রকাশিত ভিডিওর প্রথমটিতে দেখা যায়, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদছে ব্রাসলাভস্কি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমাদের খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেছে। আজ আমি শুধু তিনটি ফালাফেল (ছোলা বা ডাবরির চপ) খেয়েছি। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছি। উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তিও নেই আমার।’
অন্য ভিডিওটিতে দেখা যায়, ডেভিড মাটি খুঁড়ছে। জানান, এটি তার কবর হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক দিন ধরে অভুক্ত। সামান্য পানি পেয়েছিলাম, তা-ও উল্লেখ করার মতো নয়।’
ভিডিও দুটি প্রকাশের পর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল। আর ধৈর্য ধরতে পারছেন না জিম্মিদের স্বজনেরা। এমন পরিস্থিতে চাপের মুখে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা ‘অবিরাম ও নিরলসভাবে’ চলতে থাকবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন