ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
দেশব্যাপী চলমান হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গণধোলাই, ভাঙচুর বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৫৩ বিশিষ্ট নাগরিক।
এক বিবৃতিতে তারা জানান, ‘এসব ঘটনায় বিশেষ আতঙ্কে পড়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী, আদিবাসীসহ নানা লিঙ্গ ও বর্ণের মানুষ। অনেক মন্দির, বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানে হামলা করা হচ্ছে বলে আমরা সংবাদমাধ্যম এবং ভুক্তভোগী সূত্রে জানতে পেরেছি। কোথাও কোথাও তাদের ওপর শারীরিক নিপীড়নও চালানো হচ্ছে।’
বুধবার (৭ই আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ কথা জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, পুলিশ বাহিনী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসন টিকিয়ে রাখতে নির্বিচারে গুলি চালালেও এখন তারা কর্মবিরতিতে আছে। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জান-মাল অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা অবাধে লুটপাট, ডাকাতি, হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, অবিলম্বে পুলিশের সব সদস্যসহ, আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীকে নিজ উদ্যোগে সক্রিয় হতে হবে। মানুষের জান-মাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা দিতে হবে। চাকরিবিধি অনুযায়ী তাদের যে পবিত্র দায়িত্ব কোনও অবস্থায় তা থেকে বিরতি নেওয়া যায় না। অতীতের মতো আবারও যদি পুলিশ জনগণের ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ গভীর অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে।’
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘শত শত মানুষের প্রাণহানির মাধ্যমে অর্জিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা যেন অঙ্কুরে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য দল-মত নির্বিশেষ সবাইকে যার যার দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। পরমতসহিষ্ণুতা, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।’
হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, সংঘাত পরিহারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সব শ্রেণি, পেশা, বিশ্বাসের মানুষকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন- শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী; ড. আজফার হোসেন, তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ; আবু সাঈদ খান, সাংবাদিক ও গবেষক; মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; আ-আল মামুন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; কাজল শাহনেওয়াজ, কবি; মুহাম্মদ কাইউম, নির্মাতা; মশিউল আলম, কথাসাহিত্যিক; সায়েমা খাতুন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নৃবিজ্ঞানী ও নারী অধিকার কর্মী; লুতফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ, প্রকৌশলী; জিয়া হাশান, কথাসাহিত্যিক; পাপড়ি রহমান, কথাসাহিত্যিক; ওমর তারেক চৌধুরী, লেখক ও অনুবাদক; মাহবুব মোর্শেদ, কথাসাহিত্যিক; নাদিন শান্তা মুরশিদ, অধ্যাপক ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলো, ইউএসএ; নাভিন মুরশিদ, সহযোগী অধ্যাপক, কোলগেট ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ; মোশরেকা অদিতি হক, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অস্ট্রিক আর্যু, কথাসাহিত্যিক; দিলওয়ার হাসান, লেখক ও অনুবাদক; মোহাম্মদ রোমেল, সংগঠক; কামরুল আহসান, লেখক; সোহেলি মনি, সঙ্গীতশিল্পী; বায়েজিদ বোস্তামী, কবি; সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কথাসাহিত্যিক; অর্বাক আদিত্য, কবি; হাসান জামিল, কবি; রাখাল রাহা, লেখক, সম্পাদক; ফেরদৌস আরা রুমী, অধিকারকর্মী ও কবি; কৌশিক আহমেদ, ব্লগার; বাকী বিল্লাহ, লেখক; ফারুক ওয়াসিফ, কবি ও সাংবাদিক; রাজ্য, সঙ্গীতশিল্পী; মারুফ বরকত, লেখক; সেলিম খান, সাংবাদিক; তানজিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক; আসফিয়া আজিম, জনস্বাস্থ্যকর্মী; শামিমা সুলতানা, ডিজাইনার; খাদিজা রহমান, ডিজাইনার; আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি; মোহাম্মদ আরজু, অধিকারকর্মী; টোকন ঠাকুর, কবি; কে এম রাকিব, লেখক; মুরাদ কিবরিয়া, লেখক; মাহবুব সুমন, বিজ্ঞানী; বীথি ঘোষ, শিল্পী; সুস্মিতা রায় সুপ্তি, শিল্পী; মোহাম্মদ আজম, শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ফাখরুল আরেফীন, নির্মাতা; দীপক রায়, প্রকাশক; মাহবুব রাহমান, প্রকাশক; দীপক সুমন, অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক; খাদিজাতুল কোবরা, সংবাদকর্মী; ইসমাঈল হোসেন, সাংবাদিক।
ওআ/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন