সোমবার, ৩১শে মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘রাজনীতিতে সামরিক শাসন এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতায়’

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০২:৫৩ অপরাহ্ন, ২২শে মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

‘দেশের রাজনীতিতে সামরিক শাসন এসেছে প্রধানত রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতার কারণে’—এ পর্যবেক্ষণ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের। তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি ও বরেণ্য সমাজচিন্তক।

বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ সুখবর ডটকমকে বলেন, ‘শুধু মিলিটারি ক্ষমতার লোভে শাসনভার নিয়েছে, এ ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস বারবার সংকট ও বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই দেখা যায় রাজনীতি আর জনসেবার মাধ্যম থাকেনি, বরং পার্লামেন্ট সদস্য ও মন্ত্রী হয়ে সম্পদ গঠনের সুযোগে পরিণত হয়েছে।’

‘বর্তমানে যে নীতি চলছে, তাকে আর রাজনীতি বলা যায় না; বরং নতুন কোনো শব্দ দিয়ে এটাকে চিহ্নিত করা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের রাজনীতির প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, বরং তারা একে ঘৃণা ও ভয়ের চোখে দেখে। রাজনৈতিক নেতাদের তারা সম্মান করে না। বরং ভয়ে সালাম দেয়। অথচ সম্মান ও ভয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।’

আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন করা উচিত—যেসব নেতা সংসদ ও মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, তাদের প্রতি জনগণের সত্যিকারের শ্রদ্ধা আছে কি? তারা কি জনগণের জন্য কোনো ভালো কাজ করছেন? তাদের লক্ষ্য ও অভিপ্রায় কী? খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার দল থেকে যারা নেতৃত্বে এসেছেন, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? তাদের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা কী ছিল?’

বাংলা একাডেমির সভাপতি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি বিভিন্নভাবে, নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। খালেদা জিয়ার অবস্থাও একই রকম। তবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের চেষ্টা করেননি। তিনি তুলনামূলক সরল জীবন-যাপন করতেন। কিন্তু তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, সম্পদ অর্জনের প্রতি আগ্রহ ছিল। পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন অর্থ ও সম্পদ অর্জন করা, যা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারে।’

আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনা টানা ১৫ বছর এবং এর আগে আরও ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ এ শাসনামলে আওয়ামী লীগ সীমাহীন সম্পদের মালিক হয়েছে।’

আজকের বাংলাদেশে রাজনীতি শুধু রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নিয়ন্ত্রণে নেই মন্তব্য করে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘সিভিল সোসাইটি ও এনজিওগুলোর প্রভাব ক্রমেই বেড়েছে। এসব এনজিও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করলেও সিভিল সোসাইটি মূলত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি হিসেবে কাজ করে। বর্তমান সরকারও সিভিল সোসাইটি দ্বারা প্রভাবিত। ফলে প্রচলিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব কার্যত বিলুপ্ত হয়েছে, যা পুনর্গঠিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এইচ.এস/

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন