ছবি - সংগৃহীত
দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য শুধু মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ নয়, এর বাইরেও বিকল্প শ্রমবাজার খুঁজছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন যেসব দেশে সম্ভাবনা দেখছেন সরকার ও জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা, সেগুলোর মধ্যে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে মধ্য এশিয়ার আজারবাইজান, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের মতো দেশগুলো। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়া হলেও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে একক মাসে রেকর্ড ২৬৩.৮৭ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর জানিয়েছেন।
প্রবাসী আয়ের এই ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার নতুন শ্রমবাজার ধরতে বিভিন্ন পরিকল্পনার পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম তেল সমৃদ্ধ দেশ আজারবাইজান সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে ঢাকায় দূতাবাস খোলার বিষয়েও ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে আজারবাইজান। গত ১৪ই নভেম্বর দেশটির বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দেশটিতে বিস্তৃত কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশিদের সুযোগ সৃষ্টি প্রসঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাকুর তেল কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। বাকু এতে ইতিবাচক সাড়া দেয় বলে জানা গেছে।
ককেশাস অঞ্চলের দেশ আজারবাইজানে বর্তমানে অন্তত এক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির জাহাজ-নির্মাণ শিল্পে শত শত বাংলাদেশি কাজের সুযোগ পেয়েছেন। আরো বাংলাদেশির সেগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ থাকায় আজারবাইজানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিড় বাড়ছে। তাদের উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হয়ে ওঠছে দেশটি।
মধ্য এশিয়ার আরেক দেশ উজবেকিস্তানে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে ২০২০ সালের নভেম্বরে। দেশটির বিভিন্ন খাতে বর্তমানে শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। বৈদেশিক শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উজবেকিস্তানে দক্ষ কর্মী রপ্তানির নতুন বাজারকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, উজবেকিস্তানে দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন বার্তা নিয়ে আসবে।
খোঁজ নিলে জানা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী বছর ২০২৪ সালে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো শতকরা ২৪ ভাগ কমে গেছে। দেশের মাত্র ১৩ লাখ ৭ হাজার ৮৯০ জন শ্রমিক ২০২৪ সালে বিদেশে যান। মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনাই, মরিশাসের শ্রমবাজার গত বছরের বিভিন্ন সময় থেকে ঘোষিত-অঘোষিতভাবে বন্ধ ছিল। গত বছর দেশের শ্রমিকদের জন্য নতুন কোনো শ্রমবাজার খোলেনি। তাই নতুন বছরের শুরুতে নতুন সম্ভাবনার শ্রমবাজার খুঁজছে সরকার। জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার নেতা ফখরুল ইসলাম মনে করেন, 'বিভিন্ন দেশের নিজস্ব আর্থিক সংকটের কারণে সেসব দেশে বাংলাদেশিদের জন্য গত বছর কর্মসংস্থান কমেছে। অনেক ব্যবসায়ীও ঝুঁকির আশঙ্কা থাকায় গত বছর নতুন শ্রমবাজার খোঁজেননি।'
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কর্মকর্তারা সুখবরকে জানান, বিশ্বের মোট ১৭৬টি দেশে কাজের জন্য বাংলাদেশের শ্রমিকরা যান। দেশ থেকে গত ২০২৩-'২৪ অর্থবছরে বিদেশে ১১ দশমিক ৯৬ লাখ শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। আর ২০২২-'২৩ সালে ১১ দশমিক ৩৭ লাখ শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ যান। ২০২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪৪ শতাংশ অভিবাসী কর্মীর গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। ২২ শতাংশের গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ায়। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের নানা খাতে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা ঠিক কতোখানি এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদার কোনো পরিবর্তন হবে কী না, এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি যথাযথ কোনো গবেষণা নেই।
আই.কে.জে/