সোমবার, ১৬ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে কারণে যুগের পর যুগ শেকলবন্দি হয়ে আছে এই গাছ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:২২ অপরাহ্ন, ২০শে জুন ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

ইংরেজ শাসনামল! প্রায় দুইশ বছর নিরীহ কৃষক, সাধারণ মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে ইংরেজরা। তখন আমরা ছিলাম ইংরেজদের অধীন। তারা কারণে-অকারণে আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করত। শুধু মানুষ নয়, ইংরেজ শাসনামলে ইংরেজদের শোষণের শিকার হয়ে শাস্তি পেয়েছিল গাছও! অন্তত এমন একটি কথা পাকিস্তানের লান্ডি কোটালে প্রচলিত রয়েছে।

১৮৮৯ সালের ঘটনা। ভারতবর্ষজুড়ে ইংরেজদের তাণ্ডব চলছে। পাকিস্তানের লান্ডি কোটালে ছিল ইংরেজ সেনানিবাস। সেখানে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম না থাকায় সেনারা দিন কাটাচ্ছিল আরামে। ভারতবাসীর উপর নির্যাতন ছাড়া তাদের বিশেষ কোনো কাজ ছিল না সেসময়। মদে ডুবে বুঁদ হয়ে থাকত সেনা কর্তা থেকে শুরু করে সেপাইরা।

একদিন মাতাল অবস্থায় সেনানিবাসে ফিরছিলেন অফিসার জেমস স্কুইড। হঠাৎ তিনি ভাবলেন, কিছু একটা তার দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি ভয় পেলেন এবং সৈন্যদের বললেন- জিনিসটিকে দ্রুত বন্দি করতে। অফিসারের কথা না-শোনার বা ব্যাখ্যা দেওয়ার সাধ্য ছিল না কারো। যে কোনো নির্দেশ দ্রুত পালন করাই তাদের কাজ। ফলে সৈন্যরা শেকলবন্দি করল সেই গাছ। গাছটি ছিল বটগাছ।

পরদিন সকালে জেমস দেখলেন তারই নির্দেশে একটি গাছে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি মনে মনে লজ্জা পেলেও এ নিয়ে আর মাথা ঘামাননি। নির্দেশ দেননি শেকল খুলে ফেলার। ওদিকে নির্দেশ না পেয়ে সৈন্যরাও আর শেকল খোলেনি। 

আরো পড়ুন : অদ্ভূত শহর! ডোবে না সূর্য, হয় না রাত

আজ আর ইংরেজ শাসন নেই। ভারতবর্ষ অনেক আগেই মুক্ত হয়েছে। কিন্তু যুগের পর যুগ এখনো গাছটি রয়েছে সেভাবেই। ইংরেজ শাসনামলে এই গাছটি ছিল খোগিখেলি সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির। ইংরেজরা ক্ষমতাবলে দখলে নিয়েছিল সেই জায়গা। তারা ভারতবর্ষ ছাড়ার পর সেখানে বসবাস শুরু করে আফ্রিদি বংশের লোকেরা। সেই আফ্রিদি বংশের লোকেরাও আর গাছের শেকল খুলে ফেলেননি। 

গাছের এই শেকলবন্দি অবস্থা মূলত বিশেষ বার্তা দিতো স্থানীয়দের। ইংরেজদের শাস্তি কতটা নিষ্ঠুর এবং খারাপ হতে পারে বিষয়টি স্মরণে রাখতেই স্থানীয়রা গাছটি শেকলমুক্ত করেনি। আঘাত কিংবা হত্যা না করেও মানুষকে ভয় দেখাতে বিশেষ প্রতীক হিসেবে কাজ করতো সেই শেকলবন্দি গাছ। 

বটগাছটিকে এক সময় ব্যবহার করা হয় ফ্রন্টিয়ের ক্রাইমস রেগুলেশনের (FCR) রূপক হিসেবে। সেই আইনে বলা ছিল, কোনো উপজাতীর কেউ যদি ব্রিটিশবিরোধী পদক্ষেপ নেয় বা আন্দোলন করে তবে সমগ্র উপজাতিকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সরকার। সেই আইন কার্যকরের জন্য কোনো ধরনের আদালতের প্রয়োজন নেই। সেই আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো উকিলও এর পক্ষে সুপারিশ করতে পারবে না। ইংরেজরা যেভাবে ইচ্ছে, যত দিনের শাস্তি দিতে পারবে, এর কোনো প্রতিবাদও করা যাবে না। এরপর অনেকদিন পর্যন্ত কার্যকর ছিল এই নিয়ম।

এস/  আই.কে.জে

  

বটগাছ ইংরেজ শাসনামল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন