ছবি: সংগৃহীত
হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ দেবে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’। এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়ায় গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ এবং প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা দিতে একটি স্থায়ী কাউন্সিল গঠন করা হবে। এর নাম হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল। পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতি। সাত সদস্য হবেন কর্মে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং বিচার কর্ম-বিভাগে নিযুক্ত হাইকোর্ট বিভাগের একজন করে মোট তিনজন বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি। এ ছাড়া চেয়ারম্যান মনোনীত আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল পদাধিকার বলে কাউন্সিলের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সাবেক জেলা জজ শাহজাহান সাজু গণমাধ্যমকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত নয়। এ জন্য এই আইন অনুমোদন করতে পারছে। এটা কার্যকর হলে নির্মোহ, দলনিরপেক্ষ ও মেধাবীরা নিয়োগ পাবেন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে আইন সংশোধন করা যাবে। ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায়ও এমন আইন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিচারক নিয়োগের বিষয়ে ১৯৭২-এর সংবিধানে বলা ছিল। এর পরও কোনো সরকার এই আইন তৈরি করেনি।
বিচারক নিয়োগে হবে গণবিজ্ঞপ্তি
হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে কাউন্সিল। এ ছাড়া আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেবে। সংগৃহীত তথ্য এবং জমা পড়া আবেদন যাচাই-বাছাই করবে। কাউন্সিলের বিবেচনায় যথাযথ প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে। নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসংগত সংখ্যক প্রার্থীর নামসহ একটি তালিকা সুপারিশ আকারে প্রণয়ন ও প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করবে।
যেভাবে নিয়োগ হবে বিচারক
অতিরিক্ত বিচারকদের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক নিয়োগ করা হবে। এ জন্য কাউন্সিল সুপারিশ প্রণয়ন করে তা প্রধান বিচারপতির কাছে দেবে। চাইলে কাউন্সিল সুপ্রিম কোর্টের কোনো অতিরিক্ত বিচারকের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করতে পারবে। আবার কোনো অতিরিক্ত বিচারক স্থায়ী নিয়োগে অনুপযুক্ত হলে কাউন্সিল তাকে সুপারিশে বিরত থাকতে পারবে।
শূন্যপদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত জ্যেষ্ঠদের আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগে করা হবে। এ জন্য নির্ধারিত নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসংগত সংখ্যক নামসহ একটি তালিকা সুপারিশ আকারে প্রণয়ন ও প্রধান বিচারপতির কাছে দেবে। প্রধান বিচারপতি সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে তার পরামর্শ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। এর ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেবেন। কোনো ক্ষেত্রে এই পরামর্শের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে রাষ্ট্রপতি তথ্য এবং কারণ উল্লেখ করে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাবেন। পুনঃনিরীক্ষণের অনুরোধপ্রাপ্ত হলে প্রধান বিচারপতি যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিলে উপস্থাপন করবেন। বিষয়টি পুনঃনিরীক্ষণ করে সংশোধিত আকারে পুনঃসুপারিশ করতে পারবেন। যথাযথ তথ্য ও কারণ উল্লেখ করে আগে পাঠানো সুপারিশ কোনো সংশোধন ছাড়া পুনরায় বহাল রাখতে পারবেন। সংশোধিত অথবা সংশোধন ছাড়া গৃহীত সুপারিশ প্রধান বিচারপতি তার পরামর্শ আকারে রাষ্ট্রপতির কাছে পুনরায় পাঠাবেন। ১৫ দিনের মধ্যে পরামর্শ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন রাষ্ট্রপতি।
আরও পড়ুন: ৬৫ হাজার টাকা বেতনে ম্যানেজার নেবে ভিভো বাংলাদেশ
এসি/ আই.কে.জে