বৃহস্পতিবার, ২০শে মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদরুদ্দীন উমরসহ অন্যরা যে কারণে পুরস্কার ফিরিয়ে দেন

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:৩২ পূর্বাহ্ন, ৮ই মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চলতি বছর লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরসহ আট বিশিষ্টজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বদরুদ্দীন উমর বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এই পুরস্কার গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।’

রাষ্ট্রীয় পুরস্কার নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা বিতর্ক উঠলেও তা প্রত্যাখানের ঘটনা দেশে খুব কম। স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত সরকারি পুরস্কার প্রত্যাখানের ঘটনা সাত থেকে আটটি। যারা প্রত্যাখান করেছেন, তাদের মধ্যে সবাই কবি, লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। কারণ অনুসন্ধান করলে সুখবর ডটকম জানতে পারে, নানা কারণে তারা পুরস্কার প্রত্যাখান করলেও সেখানে রাজনৈতিক বিশ্বাসগত কারণ বেশি।

স্বাধীনতার প্রায় চুয়ান্ন বছরের মধ্যে পুরস্কার প্রত্যাখানের ঘটনা ঠিক কতটি ঘটেছে, এর হিসাব সরকারি ও বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে বাংলা একাডেমির পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা। ঠিক কতজন বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানান, বা ফিরিয়ে দেন, এর হিসাব লিখিত আকারে রাখেনি বলে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা সুখবরকে নিশ্চিত করেন।

আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। কেন তিনি পুরস্কার নেননি, তা ব্যাখ্যা না করলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা তখন বলেন, অতীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে মূল্যায়িত না হওয়ায় শেষ বয়সে পুরস্কার নিতে রাজি হননি মোজাফ্ফর আহমদ। 

ন্যাপ সভাপতি মোজাফ্ফর আহমদ স্বাধীনতা পুরস্কার না নিলেও তার সহধর্মিণী আমেনা আহমদ তখন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

বদরুদ্দীন উমর ১৯৭৩ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দেন।  অন্য কোনো পুরস্কার নিতেও অনীহা দেখান বাম ঘরানার আলোচিত এই বুদ্ধিজীবী ও চিন্তক।

স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বদরুদ্দীন উমরের পক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ই মার্চ) গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় তার দল জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। এতে বলা হয়, ‘১৯৭৩ সাল থেকে তাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হলেও সেগুলোর কোনোটিই তিনি গ্রহণ করেননি। ফলে স্বাধীনতা পুরস্কারও গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।’

শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার বাকশাল গঠন করলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখান করেন।

হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮২ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। এ বিষয়ে মামুনুর রশীদ সুখবরকে বলেন, ‘স্বৈরাচারী এরশাদের সময়ে শিশু একাডেমিতে গুলি চলেছিল। সেখানে একটা হত্যাকাণ্ড হয়। এর প্রতিবাদে পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানাই তখন।’

বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দুটি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। ২০১৯ সালে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখান করেন আমেরিকা প্রবাসী কবি ওমর শামস। মূলত প্রবাসী পরিচয়ে পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ ছাড়া ১৯৯৩ সালে সাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফা।

কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। এর ১০ বছর পর এসে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তার পুরস্কার ফেরত দেন। তিনি পুরস্কারের জন্য পাওয়া ক্রেস্ট ও আর্থিক সম্মানির চেক ওই বছরের ২৮শে জানুয়ারি ডাকযোগে বাংলা একাডেমিতে ফেরত পাঠান। 

এ বিষয়ে তার ভাষ্য ছিল, ‘গণতন্ত্রহীনতা, আমলাতান্ত্রিকতা, প্রতিষ্ঠানের মানের নিম্নগামিতা এবং আড়াই দশক ধরে নির্বাচন না দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো লোক দিয়ে একাডেমি পরিচালনায় নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়।’ তাই বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার ফেরত দিয়ে ভারমুক্ত হয়েছেন তিনি।

এইচ.এস/


পুরস্কার

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন