ছবি : সংগৃহীত
স্টেভিয়াকে বলা হয় প্রাকৃতিক চিনি। তবে চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি এই পাতা। আবার একই পাতা শুকিয়ে পাউডার তৈরি করলে মিষ্টতা বেড়ে যায় প্রায় ৫০ গুণ। তুলশি পাতার মতো দেখতে ‘স্টেভিয়া’ মধুপাতা বা চিনিপাতা নামেও পরিচিত।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকে খেয়ে থাকেন মিষ্টির বিকল্প হিসেবে। বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ চিনির পরিবর্তে স্টেভিয়া ও এর নির্যাস খেয়ে থাকেন।
স্টেভিয়া চিনির চেয়ে অধিক মিষ্টি ও ওষুধি গুণ সম্পন্ন হওয়ায় সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও রাজশাহী কৃষি অফিস। তার অংশ হিসেবে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় স্টেভিয়ার চাষ শুরু হয়েছে কৃষক পর্যায়ে।
আরো পড়ুন : ‘বাউ মুরগী’ পালন করে ভাগ্য ফিরেছে নারীদের
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোপণ থেকে শুরু করে সঠিকভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন করা সম্ভব হলে এই ফসলটি সম্ভবানাময়। প্রতিকেজি কাঁচা অথবা শুকনাপাতার গুড়া দুই থেকে চার হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ফলে হেক্টর প্রতি বছরে স্টেভিয়া চাষ করে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। একসময় ব্রাজিলে এই স্টেভিয়ার বেশি উৎপাদন হলেও বর্তমানে চীন বেশি উৎপাদন করছে। তবে চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি হলেও স্টেভিয়া মেশানো খাবারে একটা তিতা স্বাদ থাকে। তাই স্টেভিয়া সনাতন চিনির স্থান দখল করতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা চেষ্টা করছেন তিতা ছাড়া চিনির মতো স্বাদ আনতে।
জানা গেছে, পরীক্ষামূলক চাষে সফলতার পর কৃষক পর্যায়ে স্টেভিয়া চাষ ছড়িয়ে দিতে চারা উৎপাদন শুরু করে সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় কৃষকদের। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাশিয়াঙ্গায় বেশ কিছু কৃষক এই স্টেভিয়া চাষের আওতায় এসেছেন। টিস্যুকাল পদ্ধতিতে এর চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এই স্টেভিয়া সারা বছরই জমিতে রোপণ করা সম্ভব। তাই কৃষক চাইলে বছরের যে কোনো সময় এর চারা জমিতে রোপণ করতে পারবেন।
পবার কৃষক আতাউর রহমান রেন্টু জানান, এটি বিনা খরচের ফসল। বর্তমান সময়ে কচু চাষ করলেও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু স্টেভিয়া চাষে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। তবে নিয়মিত সেচ দিতে হয়।
তিনি স্টেভিয়ার চারা উৎপাদন করেছেন এবং সেই চারা কৃষকদের মাঝে বিক্রি করবেন বলেও জানান।
তিনি জানান, এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কারণ এটিতে কোনো ধরনের খরচ নেই। চলতি বছরে এক একর জমিতে স্টেভিয়ার চাষ করবেন তিনি। এই স্টেভিয়ার চাষ হলে রাজশাহীতেও বাজার তৈরি হবে বলে তিনি আশা করেন।
পবা উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা তাসনিম জানান, এখনও সেভাবে রাজশাহীতে স্টেভিয়ার চাষ শুরু হয়নি। একজন চাষি শুরু করেছেন। কিছুদিন আগে স্টেভিয়া চাষে আগ্রহী করতে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেহেতু চিনির থেকে বেশি মিষ্টি। চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন করা গেলে এই ফসলটি সম্ভাবনাময় হতে পারে।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ঈশ্বরদী ও পাবনা জোন) মহাপরিচালক ড. মো. ওমর আলী বলেন, স্টেভিয়া একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এই পাতা চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি মিষ্টি। আবার এটি পাউডার তৈরি করলে ৫০ থেকে ৬০ গুণ চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি হয়। এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে।
এস/ আই. কে. জে/
খবরটি শেয়ার করুন