ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও প্রায় ১০০ গুণ উঁচু পর্বতও আছে, আর তা-ও এই পৃথিবীর বুকেই। এমন একটি নয়, বরং দুই দুটি পর্বতের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কোথায় পাওয়া গেলো এই পর্বত দুটির সন্ধান? সম্প্রতি 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই দুই বিরাট দানবীয় শৃঙ্গ পৃথিবীর বুকে কোটি কোটি বছর ধরে থাকলেও, তা টের পাননি বিজ্ঞানীরা। কারণ এই দু'টিই রয়েছে সমুদ্রের তলায় আফ্রিকা মহাদেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগস্থলে। সেখানে পাশাপাশি রয়েছে দুই বিরাট পর্বত।
নতুন এক গবেষণা বলছে, পৃথিবীর কেন্দ্র ও ম্যান্টেলের সীমানায় দুটি দানবীয় কাঠামো রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে এই পর্বত দুটি অবস্থিত।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, পর্বত দুটির উচ্চতা প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। অপর দিকে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রায় ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেই হিসাবে, এই দুই পর্বতের উচ্চতা তার চেয়ে ১০০ গুণেরও বেশি। আর এটিই অবাক করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
এ বিষয়ে বিজ্ঞানী আরওয়েন ডিউস জানিয়েছেন, কেউ আসলে জানে না এগুলো কী। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দুটি দানবীয় কাঠামো পৃথিবীর কেন্দ্র ও ম্যান্টেলের মধ্যে অবস্থান করছে। এ দুটি পর্বত আসলে একটি বিশাল টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে। একটি টেকটোনিক প্লেট অন্য প্লেটের নিচে ঢুকে যাওয়ার কারণে পর্বত দুটি তৈরি হয়েছে।
এই দুই শৃঙ্গ দাঁড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর ‘কোর’ এবং ‘ম্যান্টেল’-এর মধ্যবর্তী এলাকায়। এই এলাকাটির রূপকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় 'সেমি সলিড' বলা হয়। এটি পুরোপুরি কঠিন নয়। পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে তরল উত্তপ্ত লাভার অংশ। আর একেবারে বাইরে কঠিন অংশ। এর মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই দুই শৃঙ্গ।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, তাদের অনেক দিনেরই সন্দেহ ছিল, সমুদ্রের তলায় এ ধরনের পর্বত লুকিয়ে থাকতে পারে। যদিও কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ ছিল না তাদের হাতে। শেষ পর্যন্ত ভূমিকম্প এবং সিসমিক শকওয়েভের চরিত্র বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
এই দুই শৃঙ্গের বয়স কত হতে পারে? বিজ্ঞানীদের অনুমান, ন্যূনতম পক্ষে ৫০ কোটি বছর। তবে এমনও হতে পারে, এগুলির বয়স পৃথিবীর বয়সের সমান। মানে, প্রায় ৪০০ কোটি বছর। সে তুলনায়, এভারেস্টকে 'নেহাত শিশু' ঠাকুরদা বলা যেতে পারে। কারণ এদের মাউন্ট এভারেস্টের বয়স 'মাত্র' ৬ কোটি বছর।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, 'আমাদের ভূপৃষ্ঠের নিচের বিশাল অংশ এখনো উত্তপ্ত ও গলিত অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হচ্ছে। এতে অনেক কঠিন কাঠামো ভবিষ্যতেও তৈরি হতে পারে। নতুন সন্ধান পাওয়া পর্বতগুলো ভূপৃষ্ঠের নিচে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে নতুন কাঠামো তৈরির বিষয়ে জানার সুযোগ করে দেবে।'
ওআ/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন