ছবি: সংগৃহীত
প্রেম, শিক্ষা এবং সৃষ্টির সঙ্গম- এক সাথে মিশে গিয়ে এসেছে আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এই আশীর্বদপুষ্ট দিনে, আমরা স্বাগত জানাই ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন এবং সরস্বতী পূজা উৎসবকে। এই তিনটি উৎসবের মেলায়, আসুন আমরা মিলে দেখি এই রমণীয় কালের মধ্যে কী কী রঙ ছড়িয়ে গিয়েছে।
ফুলের খেলা, বনের শোভা এবং মনের মিষ্টি কাব্য– এমন একটি দিনে বাঙালি হৃদয়ে আপনাআপনিই এক আবৃত্তি এসে যায়, যা ভালোবাসার, সৃষ্টির ও শিক্ষার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। ফাল্গুনের মাধুর্যে মিলন হচ্ছে এমন একটি সৃষ্টি, যা সকলের চোখে মুছে দিয়েছে রঙিন এই সময়ের মুহূর্তগুলো।
ভালোবাসা, পহেলা ফাল্গুন এবং সরস্বতী পূজা– এই তিনটি দিবস মিলিয়ে একটি অসাধারণ সমৃদ্ধ উৎসব নেমেছে আমাদের জীবনে। ভালোবাসা দিবসে সবাই হৃদয়ের আবেগে বলে থাকে, “আমি তোমায় ভালোবাসি”। এই দিনে প্রেমের আবৃত্তি কাব্যে বিশেষ রঙ ছড়িয়ে উঠে, প্রিয়জনকে অভিজ্ঞান করি ভালোবাসার ভাষায়।
পহেলা ফাল্গুনে বাঙালির জীবন হয়ে উঠে অন্যরকম। এটি সম্মিলিত হয় বাসনার, বৃষ্টির এবং সবুজের মাসে। এই মহৎ উৎসবে, প্রকৃতির নৈতিকতা ও মানুষের উৎসক্রিয়ার অভিজ্ঞান মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠে।
আর সরস্বতী পূজার এই দিনে, আমরা জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিক্ষার বাহনে সবুজের রঙে আবৃত্তি করি। আমাদের হৃদয়কে বুদ্ধির সাথে আলোকিত করি। বর্ষার সৃষ্টির অমূল্য ধান, বিদ্যা এবং ভালোবাসার আলোয় মিলে আসে এই সরস্বতী পূজার দিনে।
ভালোবাসা দিবসে মোহন অবকাশ
ভালোবাসা দিবসে একটি মোহন অবকাশ সৃষ্টি হয়, যেখানে আমরা প্রিয়জনদের সাথে সুখে থাকার ছুটি নিয়ে বৃষ্টির মতন আবেগে ভরা হয়ে থাকি। এই দিনে প্রেমের বাণী একটি মহৎ মহল বানায়, স্মৃতিগুলো এক নতুন রঙে রঙিয়ে উঠে এবং আমাদের হৃদয়ে পুরনো গল্পের ভাবনা জাগিয়ে তোলে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ এলেই ভালোবাসা নাড়া দিয়ে ওঠে নতুন করে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটি ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশেও দিনটি উদযাপন করা হয় বেশ আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের এদিনটির প্রতি বেশি আগ্রহ থাকে। তবে ভালোবাসা দিবস উদযাপন নিয়ে নানান জনের নানান মতামত রয়েছে। কেউ কেউ আবার এটিকে পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতিও বলে থাকেন। তবে যে যাই বলুক প্রেমিক-প্রেমিকারা আবার এটি মানতে নারাজ, তারা এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।
কেউ কেউ দিনটি ঘটা করে উদযাপন করলেও জানে না এই দিনটি কেন পালন করা হয়, আসলে ভালোবাসা দিবস কি? কেনইবা ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়? ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন’স ডে এর ইতিহাস কি?
ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে কিছু তথ্য:
- ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এর আনুষ্ঠানিক নাম, “সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে”।
- উইকিপিডিয়ার সূত্র মতে দিনটির ধরন, সাংস্কৃতিক, খ্রিস্টান এবং বাণিজ্যিক।
- ৪৯৬ সালে জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’স দিবস ঘোষণা করা হয়।
- ১৪ই ফেব্রুয়ারি যে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন করা হয় তা ক্যাথলিক গির্জা কর্তৃক নির্দিষ্ট। কিন্তু অর্থডক্স গির্জা কর্তৃক এটি জুলাই এর ৭ তারিখ পালন করা হয়।
পহেলা ফাল্গুনের রঙিন অভিযান
পহেলা ফাল্গুন বাঙালি জীবনে নতুন করে বর্ণরজনী তৈরি করে, সৃষ্টি করে নতুন আলোর অধ্যায়। বৃষ্টি হলেও সেই বৃষ্টি ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠে। সেই ভালোবাসার আলো একটি উজ্জ্বল ভিন্নতা নিয়ে আসে আমাদের জীবনে। এই মহৎ উৎসবে বন্ধু-বান্ধবী, প্রিয়জনদের ভালোবাসা আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে সকলের সাথে মেলবন্ধনের মিষ্টি আশা তৈরি করে। এই অদ্ভুত সৃষ্টির অভিযানে প্রতি মুহূর্তে ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে উঠে বৃষ্টির মতন।
প্রতিবছর ১৩ই ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালন করা হলেও ২০২০ সাল থেকে এই দিনটি পালন করা হচ্ছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি।
কেন ১৩ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফল্গুন?
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দিবসগুলোকে সমন্বয় করতে বাংলা ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা হয়। কেবল বাংলাদেশের জন্যই এ পরিবর্তন।
পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলা বছরের প্রথম ছয় মাস হবে ৩১ দিন। এর আগে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র অর্থাৎ বছরের প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিন গণনা করা হতো। নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ফাল্গুন বাদে শেষ ভাগের বাকি পাঁচ মাস হবে ৩০ দিনের। ফাল্গুন মাস হবে ২৯ দিনের। কেবল লিপইয়ার তথা অধিবর্ষে বছর তা ৩০ দিনের হবে।
এই বর্ষপঞ্জি পরিবর্তনের কাজটি করেছে বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ।
বাংলাদেশে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষপঞ্জি সংস্কার করা হয়েছে। ২০১৫ সালে নতুন করে পরিবর্তন আনার জন্য বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল ভারতে ১৯৫২ সালে। স্বনামধন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে প্রধান করে ভারতের সরকার একটি পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি করেছিল।
সরস্বতী পূজা
সরস্বতী পূজা হিন্দুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব যা জ্ঞান, শিল্প, সঙ্গীত এবং সাহিত্যের দেবী সরস্বতী দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। এই পূজা প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয়।
সারা বছর ধরে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন সরস্বতী পুজোর। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্যে সরস্বতী পুজো বিশেষ একটি দিন। সকাল থেকেই উপোস থেকে বাগদেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেন তারা। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের প্রার্থনা করেন সরস্বতী মায়ের কাছে। মূলত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজো হয়।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে মা সরস্বতীর অবতরণ হয়েছিল। তাই প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে, বসন্ত পঞ্চমীর উৎসব পালিত হয়। পুরাণ মতে, এই দিনে মা সরস্বতীর আরাধনা করলে মা লক্ষ্মী ও দেবী কালী উভয়ের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
এই বছর পঞ্চমী তিথি পড়েছে ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪১ মিনিট থেকে। আর পঞ্চমী থাকবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত। উদয়াতিথি অনুসারে ১৪ই ফেব্রুয়ারি পালিত হবে সরস্বতী পুজো। সেই দিনেই পালন করা হবে বসন্ত পঞ্চমী।