ছবি: সংগৃহীত
আপনার পরিবারের সদস্য এবং কাছের বন্ধুদের নিয়ে শেষ কবে ঘুরতে গিয়েছিলেন? আপনার উত্তর যা-ই হোক না কেন, আজ থেকে ঠিক করে ফেলুন, শত ব্যস্ততার মাঝেও তাদের সময় দেবেন। নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মানুষের শরীর ও মনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি ইমিউন সিস্টেম মজবুত করা থেকে শুরু করে স্ট্রোক, টাইপ-২ ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমায়।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, লোনলিনেস বা একাকিত্ব বেড়ে গেলে রক্তে পাঁচটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রোটিনগুলো সাধারণত কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টেরল, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং অকালমৃত্যুর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। গবেষণাটি ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়র’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যসূত্র ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়র’ এবং ‘ইউসিএসএফ হেলথের’।
বাংলাদেশেও করোনার সময় বিভিন্ন জরিপে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছিল। ২০২০ সালের দিকে ষাটোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে একাকিত্বের হার ছিল প্রায় ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে সেটা কিছুটা কমে হয়েছিল ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক প্রবীণ একাকিত্ব অনুভব করেন। এ তথ্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। একা থাকা, কম আয়, সহযোগী না থাকা—এসব কারণ একাকিত্বের ঝুঁকি বাড়ে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতা, গ্রামীণ পরিবেশ, উপার্জনের ঘাটতি এ বয়সীদের মেধা ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দেখা গেছে, করোনা লকডাউনের প্রথম দিকে ২০২০ সালে প্রায় ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ একাকিত্ব অনুভব করেছেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্ব মনের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। সম্পর্ক কীভাবে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, সেই প্রক্রিয়া এত দিন অস্পষ্ট ছিল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী ৪২ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেন।
তারা খতিয়ে দেখেন, কোন কোন প্রোটিন একাকী বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের রক্তে বেশি পরিমাণে থাকে। তারা লক্ষ করেন, সেগুলো কীভাবে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাঁচটি প্রোটিন একাকিত্বের কারণে বেশি পরিমাণে তৈরি হয়। এর মধ্যে কিছু প্রোটিন হৃদ্রোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং অকালমৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষণা দলের সদস্য ড. চুন শেন বলেন, ‘আমরা জানি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্ব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু তা এতদিন পরিষ্কার ছিল না। আমাদের গবেষণায় এমন কিছু প্রোটিন শনাক্ত করা গেছে, যেগুলো এ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং যেগুলোর পরিমাণ একাকিত্বের সরাসরি প্রভাবে বাড়ে।’
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বারবারা সাহাকিয়ান বলেন, ‘‘এ গবেষণা স্পষ্ট করে দেয়, সুস্থ থাকতে সামাজিক যোগাযোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন অনেক বয়সী ও তরুণ একাকিত্ব অনুভব করছেন। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বকে ‘গ্লোবাল পাবলিক হেলথ কনসার্ন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমাদের এমন উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যাতে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং সুস্থ থাকতে পারে।’’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন