ছবি: সংগৃহীত
নেপালের পর্যটন খাত জেন-জিদের দুই দিনের বিক্ষোভে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ৮–৯ই সেপ্টেম্বরের এই আন্দোলনে হোটেল ভাঙচুর, যাতায়াত ব্যাহত হওয়া এবং ব্যাপক বুকিং বাতিলের কারণে আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার রুপির ক্ষতি হয়েছে। নেপালের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিমালয়ান টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পর্যটনের শীর্ষ মৌসুম শুরুর ঠিক আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারকেরা শঙ্কিত হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদও প্রকাশ করছেন। হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের (হ্যান) প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত দুই ডজনের বেশি হোটেল ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, রাজধানী কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেল এককভাবে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতির পরিমাণই ৮ বিলিয়ন রুপির বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু কাঠমান্ডুই নয়, পোখারা, ভৈরহাওয়া, বিরাটনগর ও ধানগঢীসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বড় ধরনের এই ধাক্কা সত্ত্বেও পর্যটন খাতের নীতিনির্ধারকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক রাজ জোশী বলেন, ‘পর্যটন খাত অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে। অতীতে ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প কিংবা কোভিড-১৯ মহামারির পরও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এবারও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে।
অর্থনীতিবিদ ড. সামির খাতিওয়াড়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বিশ্ববাসীর কাছে নেপালের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে। একই সঙ্গে দেশে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বর্তমানে নেপালে থাকা প্রায় ১৫ হাজার বিদেশি পর্যটকের নিরাপদ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের সভাপতি বিনায়ক শাহ মনে করেন, দেশের পর্যটন খাত পুনরুজ্জীবিত করতে হলে সব অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। এখনই সময় বিশ্বের কাছে নেপালের ইতিবাচক বার্তা পাঠানোর।’
এদিকে ট্রেকিং এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল ও মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনসহ পর্যটন খাতের অন্য সংগঠনগুলোও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের মতে, আস্থা ফিরিয়ে আনা ছাড়া দ্রুত পুনর্জাগরণ সম্ভব নয়।
পাহাড়-পর্বত, হিমালয় ট্রেকিং, বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্য—সব মিলিয়ে প্রতি বছর লাখো পর্যটক নেপালে ভিড় করেন। এ খাত দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। শীর্ষ মৌসুম শুরুর আগমুহূর্তে এই বিপর্যয় দেশটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ, উদ্যোক্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক প্রচারণার ওপরই নির্ভর করছে নেপালের পর্যটন খাতের ভবিষ্যৎ।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন