রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উপকূলে সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৭:১৮ অপরাহ্ন, ২৫শে মার্চ ২০২৫

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

পৃথিবীর মোট পানির ৯৭ শতাংশই লবণাক্ত। ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই নিরাপদ পানির সমস্যা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব সংকট বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম সুপেয় ও ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট। পৃথিবীর প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ সারা বছর পানির গুরুতর সংকটের মুখোমুখি হন।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশই সুপেয় পানি পানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত ৪৬ শতাংশ মানুষ। বিশ্বে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছেন।

পানিতে জীবাণু, আর্সেনিক ও লবণাক্ততা রয়েছে। সারা বিশ্বই এখন নিরাপদ পানির সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সুপেয় পানি সংকটের দুর্ভোগ অন্যতম।

বর্তমানে বিশ্বে আনুমানিক ২৬০টি আন্তর্জাতিক নদ-নদী রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৪০ ভাগ লোক নদ-নদীগুলোর অববাহিকায় বসবাস করেন। পানির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিচের দিকে গড়ায় এবং কোনো সীমানা মানে না, এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যায়। 

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই পানি বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ এবং যুদ্ধবিগ্রহের কারণ। পানির সংকট একটি বৈশ্বিক সংকট। যতই দিন যাচ্ছে, এ সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

বিশ্বজুড়েই নিরাপদ পানির সংকট বাড়ছে। মানুষসহ পৃথিবীর প্রাণিকুল ও উদ্ভিদের জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও সুপেয় পানি অপরিহার্য। দূষিত পানিতে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ে। দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অপর্যাপ্ত বাজেট, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ও অসচেতনতায় নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ৬ অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছাতে হবে। দেশে নিরাপদ পানি পৌঁছানো গেছে ৫৯ শতাংশ মানুষের কাছে। দুর্গম এলাকা, গ্রামাঞ্চল ও শহরের বস্তি এলাকায় নিরাপদ পানি সহজে পাওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এসডিজির লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নিরাপদ পানির জন্য কমপক্ষে চারগুণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ সাধারণভাবে পানির সুবিধা পেলেও গুণমানসম্পন্ন নিরাপদ পানি এখনো সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়নি। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, এটা একটা সমস্যা। পানি শোধনাগার যা আছে, তা যথেষ্ট নয়। তবে সরকার এসডিজির লক্ষ্য পূরণের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

নিরাপদ পানি নিয়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেক এলাকার পানি লবণাক্ত। কোনো এলাকার পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। পাহাড়ের মতো দুর্গম এলাকার নারীরা খাওয়ার পানি সংগ্রহে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। খাওয়ার পানি নিয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন দুর্গম পাহাড়ি জনপদের মানুষ। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘদিনের সুপেয় পানির সংকট রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ধ্বংসযজ্ঞের পর এ সংকট আরো তীব্র হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যা এখনো পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিগত বছরগুলোতে ক্রমাগতভাবে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে। যার কারণে উপকূলে পানযোগ্য পানির অভাব দিনদিন বাড়ছে।

এইচ.এস/

সুপেয় পানি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন