মঙ্গলবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ যেখানে শক্তিশালী হচ্ছে, সেখান থেকেই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে: রনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৮:১৪ অপরাহ্ন, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ব্রিটেনের লন্ডনে শক্তিশালী হচ্ছে আর সেখান থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। তবে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে লন্ডনে আওয়ামী লীগ যে আচারণ করেছে, তা দেশের জন্য খুবই লজ্জাকর বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি।

তার মতে, আওয়ামী লীগের দিনে দিনে শক্তি বাড়ছে। ব্রিটেনের জনমত এস্টাবলিশমেন্টবিরোধী থাকে। সে কারণে এখন যারা ওখানে আওয়ামী লীগে আছেন, তারা তুলনামূলকভাবে বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছেন। এখন লন্ডনে যে কাজটি আওয়ামী লীগ করতে পারছে, সে কাজটি চাইলেও জামায়াত করতে পারবে না। সেখানে রাজনীতির একটা নিয়ম হলো, যখন একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়, তখন প্রতিপক্ষ তার সঙ্গে সমঝোতা করে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ই সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত এক ভিডিওতে এসব মন্তব্য করেন তিনি। 'লন্ডনে আওয়ামী লীগের ব্যপক শোডাউন, ঢাকার রাস্তায় ঝটিকা মিছিল, রাজনীতিতে নতুন আতংক' শিরোনামে তার ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। আজ রাত ৮টা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ২৭ হাজারের বেশি বার, এতে লাইক এসেছে ৮৭৩টি এবং মন্তব্য এসেছে ১৮৮টি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। এরপর তিনি লন্ডন, ফ্রান্স ও ব্রাসেলসে প্রবাসী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে ফোনে বক্তব্য দিলেও দলটির নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগের প্রথম তথ্য সামনে আসনে আসে গত বছরের ডিসেম্বরে। তখন লন্ডনে আওয়ামী লীগের আয়োজিত এক সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি ভাষণ দেন।

ওই সমাবেশের দর্শকসারিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পর প্রথমবারের মতো দেখা গেছে। সেখানে সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও দেখা যায়। চলতি বছরের জুনে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরে গেলে ডরচেস্টার হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ব্রিটেনে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা। প্রধান উপদেষ্টার লন্ডনে অবস্থানের পুরোটা সময় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

গত ১২ই সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনের সোয়াস-ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন আয়োজিত কর্মসূচি শেষে বের হলে আওয়ামী লীগের একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করেন। কিছু সময়ের জন্য গাড়ির পথরোধের চেষ্টা চালান। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্ত গাড়িতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ছিলেন না।

গোলাম মাওলা রনি আজকের ভিডিওতে বলেন, ‘লন্ডন শহরে আওয়ামী লীগ একের পর এক শোডাউন করে যাচ্ছে। অবস্থার দৃশ্য মনে হচ্ছে যে, লন্ডন থেকেই মূলত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে।'

লন্ডনে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস ও বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। ভিডিওতে রনি জানান, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে এয়ারপোর্টে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিসিভ করতে এসেছিলেন। নিজেই গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন এবং বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ সব কিছুই হয়েছিল কারণ, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের বড় একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লন্ডনে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।'

বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর গ্রুমিংটাও লন্ডনে হয়েছে বলে দাবি করেছেন গোলাম মাওলা রনি। তার দাবি, যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন, তখন ওখানকার আওয়ামী লীগ বিএনপির দ্বারা বহুবার অপদস্থ হয়েছে।

রনি বলেন, ওখানকার (ব্রিটেন) জনমতটা এস্টাবলিশমেন্টবিরোধী থাকে। সে কারণে এখন যারা ওখানে আওয়ামী লীগে আছেন, তারা তুলনামূলকভাবে বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘এখন লন্ডনে যে কাজটি আওয়ামী লীগ করতে পারছে, সে কাজটি চাইলেও জামায়াত করতে পারবে না। কারণ, ব্রিটিশ জনপথ এবং পরিবেশ ওভাবে কাজ করে না। তো সেই দিক থেকে গত এক বছরে আওয়ামী লীগ ওখানে যেসব অঘটন ঘটিয়েছে, এ রকম অঘটন আসলে ইতিপূর্বে বিএনপি-জামায়াত ঘটাতে পারেনি।’

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের সঙ্গে তারা (লন্ডন আওয়ামী লীগ) যে নজিরবিহীন আচরণ করেছে, সেটা দেশের জন্য খুবই লজ্জাকর। কিন্তু আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে ভীষণ খুশি। তারা মনে করছে যে, তারা বাপের ব্যাটার মতো একটা কাজ করতে পেরেছে। সিরিয়াসলি যেটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মনে রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ওখানে (লন্ডনে) ডে বাই ডে যেভাবে আওয়ামী লীগের শক্তি বাড়ছে। এখানে রাজনীতির একটা খুব নিষ্ঠুর নিয়ম হলো, যখন কোনো একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে যায়, তখন প্রতিপক্ষ তার সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে। যেমন জামায়াত ইংল্যান্ডে খুব শক্তিশালী ছিল।'

তিনি বলেন, 'দেশের জামায়াতের অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, ইংল্যান্ডের যত বিখ্যাত বিখ্যাত আওয়ামী লীগের নেতা, তাদের প্রয়োজনে তারা অনেকেই জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন এবং তাদের নিকট ধরনা ধরতেন। এমনকি বিএনপির লোকজনও সে কাজটি করতেন। এখন যদি আওয়ামী লীগ ওখানে সাংগঠনিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে যায় তখন দেখবেন যে এই জামায়াতের যারা লোকজন আছেন, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বন্ধুত্ব শুরু করবেন।'

আওয়ামী লীগ গোলাম মাওলা রনি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250