শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থেমে নেই মা ইলিশ নিধন, দরকার কার্যকর অভিযান

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ১০:০৮ অপরাহ্ন, ২৫শে অক্টোবর ২০২৪

#

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। সাগর ও নদী দুই জায়গায়ই ইলিশের বিচরণক্ষেত্র। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। একসময় ইলিশ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল এবং এমন প্রেক্ষাপটে মা ইলিশ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে প্রজনন ও উৎপাদন বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে গত ১৩ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। 

বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশ এবং দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ প্রায় ১২ শতাংশ।

মা ইলিশের সঠিক প্রজনন ও বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে ইলিশ মাছ রক্ষায় সরকার ১৩ অক্টোবর থেকে ৩রা নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোট ২২ দিন প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ সময়ে মা ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। মা ইলিশ মূলত বছরে দুবার ডিম দেয়। অধিকাংশ মাছ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এবং বাকিগুলো ফেব্রুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল মাসে।একটি মা ইলিশ প্রতি মৌসুমে ১০ থেকে ২৩ লাখ পরিমাণ ডিম পাড়ে। ডিমগুলোকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে মা ইলিশ মুখে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ডিম থেকে বাচ্চা না ফোটা ও সাঁতার শেখা পর্যন্ত মা ইলিশের পরিচর্যা চলতে থাকে। সাঁতার দেয়ার উপযোগী হয়ে উঠলে বাচ্চারা মা ইলিশের সঙ্গে সাঁতার কেটে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ায়। ইলিশের বাচ্চা লালন-পালনে বাবা ইলিশও ভূমিকা রাখে।

এত পরিচর্যার পরও মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ জাটকা সমুদ্রের নোনা পানিতে সঠিকভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পায়। কারণ ডিমের প্রায় ৩০ শতাংশ অন্যান্য মাছ ও প্রাণীদের আহারে চলে যায়। ১০ শতাংশ অপুষ্টিজনিত কারণে শুরুতেই নষ্ট হয়ে যায়। পরে প্রায় ২০ শতাংশ পোনা এবং ৩০ শতাংশ জাটকা হিসেবে জেলেদের জালে। ইলিশ পোনা ৬ থেকে ১০ সপ্তাহে ১২ সেমি থেকে ২০ সেমি পর্যন্ত বড় হয়। তখন তাদের জাটকা বলে। একটি জাটকা মাছ পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হতে সময় নেয় ১ থেকে ২ বছর। তখন আয়তনে ৩২ সেমি থেকে ৬০ সেমি এবং ওজনে ১ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। জাটকারা মা ইলিশের সঙ্গে সমুদ্রে চলে যায়। সেখানে পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হয়ে আবার প্রজননকালে নদীতে ফিরে। 

ইলিশ রক্ষায় নদীতে সরকারি প্রশাসন, মৎস্য অফিস, নৌ-পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযানে লাখ লাখ মিটার জালসহ জেলেদের আটক করা হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রলার জব্দ, জেলেদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরও নদীসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। নিষেধাজ্ঞার কথা যেন কোনোভাবেই জেলেদের কানে যাচ্ছে না। ইলিশ কিনতে পদ্মা পাড়ের দুর্গম চরাঞ্চলে ছুটে আসছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা। অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নিষিদ্ধ মৌসুমে গড়ে উঠা অস্থায়ী ইলিশের হাটে। পুলিশ একদিকে অভিযান করে, আরেক দিকে জেলেরা মাছ ধরে এবং বিক্রি করে। রাত-দিন সবসময় মাছ ধরা ও বেচাকেনা চলে। অভিযান শুধু নদীতে নয়, পদ্মার চর এলাকায় গড়ে উঠা অস্থায়ী হাটে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই কেবল মাছ ধরা বন্ধ হবে।

আই.কে.জে/

ইলিশ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন