৯ই অক্টোবর থেকে ১৩ই অক্টোবর পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এবার সারা দেশে প্রায় ৩১ হাজারটি এবং রাজধানী ঢাকাতে ২৩৪টি পূজা হচ্ছে। প্রতিবছরই পূজার সময় সারা দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। পূজামন্ডপ ভাঙা, হামলাসহ বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। এবছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আশ্বস্ত করেছে পূজায় কোনো অরাজক পরিস্থিতি হবে না। পূজা নির্বিঘ্নে পালিত হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, (ক) শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব এবং আনসার ও ভিডিপি কর্তৃক দৃশ্যমান টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। (খ) যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা প্রতিরোধে পূর্বপ্রস্ততি গ্রহণ করতে হবে। অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো ঘটনার সূত্রপাত ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। (গ) স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই পুজামন্ডপসমূহ পরিদর্শন করবে। (ঘ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, এরূপ কোনো বক্তব্য বা গুজব ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। (ঙ) সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটিসমূহকে পূজামণ্ডপসমূহে সার্বক্ষণিক পাহারার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও পাহারাদার (পালাক্রমে দিনে কমপক্ষে তিন জন এবং রাতে চার জন) নিয়োজিত থাকবে। (চ) প্রতিটি পূজামপে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। (ছ) শারদীয় দুর্গাপূজার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। (জ) জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকরা এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এরূপ কমিটি গঠন করবেন। তা ছাড়াও দুর্গাপূজাকে আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৮৪ হাজার কর্মীবাহিনী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করবেন।
অতীতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, মন্দির আক্রমণের পর স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে একটা গা-ছাড়া মনোভাব লক্ষ করা গেছে। অধিকাংশ ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। যার কারণে প্রতিবছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে। যদি কোনো গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে রাতের আঁধারে প্রতিমা ভাঙচুর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মনে ভীতির সঞ্চার করে তাহলে সরকারকে কঠোর হস্তে তাদেরকে দমন করতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের কঠোর বার্তা দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় যা-ই হোক না কেন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, উৎসব করার স্বাধীনতা সকলের সমান। এখানে কোনো ধরনের বৈষম্য কাম্য নয়। এটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
আই.কে.জে/