শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওকালতি পড়ে কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ, আয় কোটি টাকারও বেশি

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার শ্যামাগাঁও এলাকা। এখানে ৯ একর বিস্তৃত জমিতে ফলফলাদির বাগান গড়ে তুলেছেন আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কৃষক মাসুদ রানা। খামারের নাম–ঠাকুরগাঁও এগ্রো ট্যুরিজম পার্ক অ্যান্ড নার্সারি। এই গ্রামকে সবুজ-শ্যামল করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ রানা। 

শুধু গ্রামকে শ্যামলিমায় জড়িয়েই শান্ত হননি তিনি। গাছের সঙ্গে মিতালি করে গড়ে নিয়েছেন নিজের ভাগ্যটাও। গত ৪ বছরে বাগান থেকে মাসুদের আয় কোটি টাকার বেশি। এর পুরোটাই ‘হালাল’ বলে মনেও শান্তি খুঁজে পাচ্ছেন তিনি।

মাসুদ রানা বলেন, ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি মায়া ছিল তাঁর। তাই পড়াশোনা শেষ করে পড়েন বাগান করার নেশায়। মূলত হালাল আয়ের লক্ষ্যেই তিনি কৃষিভিত্তিক এ পেশায় নিয়োজিত করেছেন নিজেকে।

ঠাকুরগাঁও সদরে পড়লেও মাসুদের বাগানটি আটোয়ারী ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে কাছে। বোদা থেকে এটি ৫ ও আটোয়ারী থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

বোদা-আটোয়ারী আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে এগোলে উত্তর পাশে পড়বে মাসুদের বাগান। দেখা যাবে, বিস্তৃত বেষ্টনীঘেরা সবুজের সমারোহ। প্রায় সাড়ে ৭ একর জুড়ে ১২ ফুট অন্তর অন্তর আমের সারি। ফাঁকে ফাঁকে মাল্টাগাছ। আরও আড়াই একর জায়গা নিয়ে কমলার সারি। রয়েছে আম, মাল্টা ও কমলার চারাও।

মাসুদ জানান, তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি ৯ জাতের আম রয়েছে। মাল্টা ও কমলা রয়েছে ৫ ও ৬ ধরনের। এসব জাত তিনি স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছেন। এখান থেকে কলম পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন।

এ বাগানের আমের জাতগুলো হলো–কিং অব চাকাপাত, চিয়াংমাই, অস্টিন, হানিডিউ, ব্যানানা, থ্রিটেস্ট, সূর্যডিম ও বারি ৪। মাল্টার জাতের মধ্যে আছে– ইয়োলো মাল্টা, ইয়োলো মাল্টা ২, মরোক্কো মাল্টা, বারি ১ ও ভিয়েতনাম মাল্টা। কমলার জাত হলো–চায়না, রামরঙ্গন, পাকিস্তানি ২, ইম্পেরিয়াল ম্যান্ডারিন, ইন্ডিয়ান ও থাই ২ কমলা।

মাসুদ জানান, তাঁর বাগানে মাল্টা ও কমলার চারার উৎপাদন বছরে ১ লাখ। এসব চারা যায় চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বগুড়া, ফেনি, কুমিল্লা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, শররীয়তপুর, সিলেট ও খাগড়াছড়িতে। আমের চারা বছরে উৎপাদন ৫০ হাজার। এ চারা সবচেয়ে বেশি যায় পাহাড়ে, বিশেষ করে খাগড়াছড়ি।

ঠাকুরগাঁও এগ্রো ট্যুরিজম পার্ক এন্ড নার্সারিতে গেলে দেখতে পাবেন, সবুজ পাতার ফাঁকে কোথাও উঁকি দিচ্ছে হলুদ মাল্টা, কোথাওবা কচি কমলা। কোথাও থোকায় থোকায় ঝুলে আছে সিঁদুররাঙা আম, কোথাওবা ঝুলছে কলার মতো দেখতে ব্যানানা ম্যাঙ্গো।

কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ বলেন, তাঁর বাগানে ফলন ভালো। গতবার ১২-১৩ টন আম উৎপাদন হয়েছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রা একই ছিল। তবে গরম একটু বেশি পড়েছে। ফলে গাছ থেকে আম ঝরে যাচ্ছে। এবার ৭ থেকে ৮ টন আম উৎপাদন হতে পারে।

গত বছর মাসুদের বাগানে টনখানেক কমলা উৎপাদন হয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রা ২ টন। মাল্টা গতবার হয়েছিল ১১ টন। এবার লক্ষ্যমাত্রা আরও ২ টন বেশি অর্থাৎ ১৩ টন।

বাগানের নেশায় পড়লেন কীভাবে– এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই গাছপালা ভালো বাসতেন। অনেক গাছ লাগিয়েছেন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। কিন্তু মন পড়ে ছিল গাছের মায়ায়।

মাসুদ জানান, ২০১৮ সালে তাঁর স্ত্রীর চাকরি হয়। ফলে তিনি ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও চলে আসেন। কিছুদিন জেলা জজ আদালতে যাতায়াতও করেন। পরে নিজেদের পৈতৃক জমিতে বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। একই বছরের জুলাইয়ে তিনি প্রথমে ৪ বিঘা জমিতে আমের বাগান করেন। মূলত ইন্টারনেট ঘেঁটে এবং কাজ করতে করতে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাঁর।

প্রায় ৫ বছর পর এসে এখন ওই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলেই মনে করছেন মাসুদ। তিনি বলেন, তাঁর বাগানে এখন ৫-৬ জন লোক নিয়মিত কাজ করেন। তাঁদের মাসে লাখখানেক টাকা মাইনে দিতে হয়। এগুলো ছাড়াও তাঁর আয় কোটি টাকার বেশি। 

আরো পড়ুন: দেশে গরুর কৃত্রিম প্রজননে বড় সাফল্য

মাসুদ বলেন, তাঁর বাগান থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফল বিক্রির পাশাপাশি অনেককে বিনা মূল্যে খেতেও দেন। যারা বাগানে বেড়াতে বা কিনতে আসেন তাঁরা দেদার ফলফলাদি খান, নিয়ে যান। গতবার তিনি প্রায় আড়াই টন মাল্টা শুধু পর্যটকদের খেতেই দিয়েছেন।

বাগান নিয়ে মাসুদের স্বপ্ন আরও বড়। নামেই বোঝা যায়, তিনি এখানে একটা কৃষিবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পার্কও গড়ে তুলছেন। এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী বছর এ পার্ক খুলে দেওয়ার চিন্তা তাঁর।

এসি/  আই.কে.জে


ওকালতি কৃষি উদ্যোক্তা

খবরটি শেয়ার করুন