ছবি: সংগৃহীত
আজ বৃহস্পতিবার (২৭শে মার্চ) চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে দেশব্যাপী গঙ্গাপূজা ও মহাবারুণী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিতে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। পাপমুক্তির আশায় নদীতে স্নান করেন পুণ্যার্থীরা। পূজা-অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে স্নানে অংশ নেন সব বয়সী মানুষ। তারা পাপ মোচনসহ পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্টে ভোর থেকে জমতে শুরু করে মানুষের ভিড়। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, দল বেঁধে মানুষ উত্তাল সমুদ্রে নেমে শরীর ভেজাচ্ছেন। কেউ কেউ দিচ্ছেন ডুব। কক্সবাজার সৈকতেও মহাবারুণী স্নান ও পূজার আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটি।
মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে পূজা, ভাগবতীয় অনুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে অদ্বৈত-অচ্যুত মিশন কক্সবাজার জেলা শাখা। ধর্মীয় আয়োজনে পৌরোহিত্য করেন শ্রীমৎ স্বামী দেবদীপানন্দ পুরী মহারাজ।
দুপুরে উৎসবস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রোমেন শর্মা। তিনি বলেন, ‘সৈকতে হাজারো ভক্তের উপস্থিতি এবং শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন প্রমাণ করে কক্সবাজার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের শান্তি চাই।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গাদেবী বিপদনাশিনী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেন তিনি। পৃথিবীর সব পানি নিয়ন্ত্রণ করেন দেবী। তাই তার অবস্থান পানিতে। পানির মাধ্যমে মানবকল্যাণ করেন দেবী গঙ্গা।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রে এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান। শহর ছাড়াও জেলার রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার ভক্ত সৈকতে উপস্থিত থেকে পূজায় অংশ নেন।
মানিকগঞ্জের শিবালয় আরিচা ঘাটে আয়োজন হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহাবারুণীর স্নান। ঐতিহ্যবাহী বারুণীর স্নান ঘিরে নদীর পাড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা।
বারুণীর স্নানে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে জড়ো হন হাজারো পুণ্যার্থী। সকাল ৭টা থেকে যমুনা নদীতে এ স্নান কাযর্ক্রম শুরু হয়। এ উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী হাজারো নারী-পুরুষ পরিবার পরিজন নিয়ে স্নান করতে আসেন। তারা পুরোহিতদের মাধ্যমে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্নান করেন। পুণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে আরিচা ঘাট।
এদিকে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা নদীতে শুরু হয়েছে পণাতীর্থ বা গঙ্গাস্নান। তবে মহাবারুণী স্নান নামে পরিচিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবে এবার পুণ্যার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম দেখা গেছে।
প্রতিবছর একই সময়ে যাদুকাটার তীরে লৌকিক পীর খ্যাত সাধক শাহ আরেফিনের মাজারেও ওরশ হয়, বসে মেলা। এবার সেই ওরশ-মেলাও হচ্ছে না।
শ্রীশ্রী অদ্বৈত জন্মধাম কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অদ্বৈত রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বুধবার রাত থেকেই পূণ্যস্নান সম্পন্ন করা শুরু করেছেন ভক্তরা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত স্নানের লগ্ন আছে। এবার পুণ্যার্থীদের উপস্থিতি কম।’
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন