প্রতীকী ছবি
শহর কিংবা গ্রাম আপনি যেখানেই থাকুন না কেন নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা-দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়। একটু সচেতন হলেই কিছু দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। তবে কিছু দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানোর কোনো উপায় থাকে না। সেক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়লে অনেক সময় আমরা কী করব বুঝতে পারি না। এখন প্রায় সবার কাছেই মোবাইল ফোন থাকে। তাই দ্রুত সহায়তা পেতে কিছু নম্বরে ফোন করা যায়। এমনই জরুরি কিছু ফোন নম্বর ও সেগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
জাতীয় জরুরি সেবা (৯৯৯)
যে কোনো পরিস্থিতিতে এখন সবচেয়ে জরুরি নম্বর হলো ৯৯৯। এটি দেশের জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর। কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে জরুরি সেবা পেতে দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কেউ এই নম্বরে ফোন করতে পারেন। পুলিশের অধীনে এই কল সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে।
এই নম্বরে ফোন করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা কিংবা এ–সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এ কল সেন্টার চালু থাকে। যে কোনো ফোন থেকে বিনামূল্যে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা যায়।
স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩)
যে কোনো সময় যে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এ সময় পরিচিত কোনো চিকিৎসককে ফোন করে নাও পেতে পারেন। আবার সবার তো পরিচিত চিকিৎসক নাও থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে নিশ্চিন্তে ফোন করা যাবে স্বাস্থ্য বাতায়নের হেল্পলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত হেল্পলাইন। এই নম্বরে ফোন করে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নেওয়া যাবে। ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এই নম্বর।
সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে সরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকের তথ্য কিংবা স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক অন্যান্য যে কোনো তথ্য ও ফোন নম্বর পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য বাতায়নের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এই নম্বরে ফোন করতে প্রতিমিনিট ২.৩৭ টাকা চার্জ (ভ্যাটসহ) প্রযোজ্য। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে যে কেউ অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন।
দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এই নির্যাতন প্রতিরোধে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল’ চালু করা হয়েছে, যার নম্বর ১০৯২১। কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে, বখাটেদের আক্রমণের মুখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে এই নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল (১০৯)
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির আওতায় এই কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এ নম্বরে ফোন করতে কোনো চার্জ দিতে হবে না। ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এই নম্বর।
চাইল্ড হেল্প লাইন (১০৯৮)
সুবিধাবঞ্চিত, নির্যাতিত ও বিপদাপন্ন শিশুদের ২৪ ঘণ্টা জরুরি সহায়তা সেবা দিতে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এই হেল্পলাইন পরিচালনা করছে। এই নম্বরে ফোন করতে কোনো চার্জ লাগবে না।
সরকারি আইন সেবা (১৬৪৩০)
অনেক সময় দুস্থ ও দরিদ্র মানুষ টাকার অভাবে আইনি পরামর্শ বা সহায়তা পান না। ফলে কেউ কেউ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। তাদের কথা ভেবেই বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও আইনগত সহায়তা দিতে ১৬৪৩০ নম্বর চালু করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনি সহায়তা সংস্থা এই সেবা দিয়ে আসছে। যে কোনো মোবাইল অপারেটর ও টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে এই নম্বরে ফোন করা যাবে। ফোন করলে লাগবে না কোনো টাকা।
জাতীয় পরিচয়পত্র (১০৫)
জাতীয় পরিচয়পত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এই পরিচয়পত্র হারিয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। আবার দেখা যায় যে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্র নতুন করে করতে হয়। সে ক্ষেত্রে ভুল হলে সংশোধন করতে হয়। কখনো কখনো হালনাগাদের প্রয়োজন হয়। এসব বিষয়ে জানতে বা জাতীয় পরিচয়পত্র বিষয়ে যে কোনো তথ্যের জন্য ১০৫ নম্বরে ফোন করা যাবে। নির্বাচন কমিশন এই হেল্পডেস্ক চালু করেছে ২০১৫ সালে। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ১০৫ নম্বরে ফোন করে জাতীয় পরিচয়পত্রসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন।
বিটিআরসি (১০০)
ফোন ব্যবহার করেন না এমন মানুষের দেখা পাওয়া কঠিন। দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ফোন সেবা দিয়ে আসছে। গ্রাহক সেবা দিতে এসব প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার রয়েছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকেরা কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে সেবা সম্পর্কে তথ্য ও অভিযোগ জানাতে পারেন। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কল সেন্টার (১০০) চালু করে। বিনা খরচে ফোন করে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারবেন এই নম্বরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক (১৬২৩৬)
ব্যাংকিং সেবা পেতে হয়রানির শিকার হলে বা কোনো অভিযোগ থাকলে তা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো যাবে ১৬২৬৩ নম্বরে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের হেল্পলাইন। কোনো গ্রাহক কোনো ব্যাংকে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে বা কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তা গ্রাহককে যথাযথ সেবা না দিলে এই নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ জন্য স্বাভাবিক কল রেট প্রযোজ্য হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (১০৬)
দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য জানাতে হটলাইন ১০৬ চালু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। টেলিফোন বা যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে কল করা যাবে এই নম্বরে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়। অভিযোগকারী চাইলে তার বক্তব্য রেকর্ড করা যাবে। অফিস চলাকালে, অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কল করা যাবে এই নম্বরে।
ইউনিয়ন পরিষদ হেল্পলাইন (১৬২৫৬)
ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে যে কোনো ভাতা বা অনুদানসংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ সেবা দিতে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ হেল্পলাইন ১৬২৫৬। যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে এই নম্বরে ফোন করা যাবে। এ জন্য স্বাভাবিক কল রেট প্রযোজ্য হবে।
আরও কিছু প্রয়োজনীয় নম্বর
কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩), বিটিসিএল (১৬৪০২), দুর্যোগের আগাম বার্তা (১০৯৪১), প্রবাস বন্ধু কলসেন্টার (০৯৬৫৪৩৩৩৩৩৩), ঢাকা ওয়াসা (১৬১৬২)।
ওআ/ আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন