প্রতীকী ছবি
দেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকপণ্য ব্যবহারে মারা যান। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত।
বুধবার (১৮ই ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি একটি উদ্বেগের বিষয়। তামাক-সম্পর্কিত রোগের বিপজ্জনক প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত এবং কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ তামাকপণ্য ব্যবহারের কারণে মারা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত। ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু (১৫ বছরের কম বয়সী) পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো কন্ট্রোল ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (এফসিটিসি) বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে যাচ্ছে।
এই সিনিয়র জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, তামাক সেবন বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু এবং রোগের একটি প্রধান কারণ। বাংলাদেশে তামাক সেবনের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। সিগারেট, বিড়ি এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আসক্ত, যার মধ্যে ৪৬% পুরুষ এবং ২৫.২% নারী (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট ট্যোবাকো সার্ভে-২০১৭)। এই আসক্তি শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষতি করে না, বরং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো কন্ট্রোল ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (এফসিটিসি) তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে, যা বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করবে:
(১) বর্তমান আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা। অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA)’ নিষিদ্ধ করা। (২) বিক্রয় কেন্দ্র থেকে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা। বিক্রয় কেন্দ্রের প্রদর্শন বিশেষ করে তরুণদের প্রভাবিত করে এমন একটি বিজ্ঞাপনের অপসারণ তামাকজাত দ্রব্যের দৃশ্যমানতা এবং আকর্ষণ কমিয়ে দেয়।
(৩) তামাক কোম্পানিগুলোর সমস্ত ধরনের করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব (সিএসআর) প্রোগ্রাম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোকে কোনো সিএসআর কার্যকলাপে জড়িত হতে নিষিদ্ধ করা হবে, যেমন ইভেন্ট স্পন্সর করা, দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা বা জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযান পরিচালনা করা।
(৪) ই-সিগারেট, ট্যোব্যাকো প্রোডাক্ট-সহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। এগুলো বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে আসক্তির দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং তামাক ব্যবহারের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে।
(৫) তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেজিংয়ে চিত্রসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে ৯০% করা: তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে আরও কার্যকর। এগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রতি সচেতনতা বাড়ায়।
(৬) বিড়ি- সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, খুচরা শলাকা বিক্রি তামাককে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করে তোলে, বিশেষ করে তরুণ এবং নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা খরচ কমাতে তাদের সিগারেটের ব্যবহার সীমিত করতে সহায়তা করবে।
ওআ/ আই.কে.জে