ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি গর্বের সঙ্গে জাতীয় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ঘোষণা দেন। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এই সনদকে 'বর্বরতা থেকে সভ্যতায় উত্তরণ' হিসেবে অভিহিত করেন। তার বক্তব্যে একাধিকবার এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
তিনি বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) যদি 'বর্বরতার' সময়কাল নির্দিষ্ট করতেন, যেমন শেষ শাসনকাল (শেখ হাসিনার সরকার), তাহলে তার বক্তব্যের অর্থ স্পষ্ট হতো। এখন যেভাবে বলা হয়েছে, তাতে মনে হতে পারে, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরই 'বর্বরতার' মধ্যে কেটেছে।
মাহফুজ আনামের প্রশ্ন, কোনো গর্বিত বাংলাদেশি কি এটি মেনে নিতে পারবেন? আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও পুরো সময়কালের সাক্ষী হিসেবে এমন নিন্দা মেনে নিতে পারি না। এটি আমাদের কেমন মানুষ হিসেবে দেখায়? বিশ্বে আমাদের সম্পর্কে কী ধারণা তৈরি করে? হ্যাঁ, আমাদের কিছু ব্যর্থতা আছে, কিন্তু আমরা কি সত্যিই 'বর্বর' ছিলাম?
ডেইলি স্টারে লেখা এক উপসম্পাদকীয়তে মাহফুজ আনাম এসব কথা বলেন। তার লেখাটি 'ইউনূস, চার্টার অ্যান্ড আওয়ার ফিউচার' শিরোনামে গত ২৪শে অক্টোবর পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়। ওই কলামে তিনি একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করেন। তার এ লেখার লিংক ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে অনেক নেটিজেন 'মাহফুজ আনাম মুক্তিযোদ্ধা কী না, কোন সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেছেন', এসব প্রশ্ন সামনে এনেছেন।
অনেক নেটিজেনের দাবি, মাহফুজ আনাম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই প্রথমবারের মতো দাবি করেছেন, বিশেষ রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিবেশে। তাদের এসব দাবির পক্ষে-বিপক্ষে নানামুখী আলোচনা চলছে। জ্যেষ্ঠ ও প্রবীণ নেটিজেনদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নিয়ে উল্লেখ করছেন, সাংবাদিক মাহফুজ আনাম স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, এ বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণার সুযোগ নেই।
তারা বলছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মাহফুজ আনাম ভারতের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে রণাঙ্গনে যুদ্ধের জন্য নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। ফলে তিনি রণাঙ্গনের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। যা অতীত অনেকবার দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন।
‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর প্রকাশক ও সম্পাদক মাহফুজ আনাম। এর আগে তিনি দৈনিক ‘প্রথম আলো’র প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক ছিলেন। একসময় তিনি ছিলেন বিনোদন পত্রিকা পাক্ষিক আনন্দধারা এবং সাপ্তাহিক ২০০০ এর প্রকাশক। তার বাবা স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক প্রয়াত আবুল মনসুর আহমদ। মাহফুজ আনামের অগ্রজ মাহবুব আনাম ছিলেন দেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক।
মাহফুজ আনাম আড়াই দশক ধরে দেশের প্রধান ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য সক্রিয়, ১৯৭১ সালে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। এক দশক জাতিসংঘে কাজ করার পর দেশে ফিরে এসে ১৯৯১ সালে ডেইলি স্টার শুরু করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন তিনি।
অবশ্য এক এগারোর সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে মাহফুজ আনামের সম্পাদিত ডেইলি স্টার অশুভ শক্তির সরবরাহ করা সংবাদ যাচাই-বাছাই না করে ছাপিয়ে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করেছে বলে অভিযোগ আছে। একপর্যায়ে তিনি বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে স্বীকার করেন, তিনি এক এগারোর সময় গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যে যাচাই-বাছাই ছাড়া সংবাদ ছেপে ভুল করেছিলেন।
দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গত ২৩শে মে প্রকাশিত এক বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদনে লেখেন, '২০০৭ সালে একই সুশীল পত্রিকার ডাকসাইটে সম্পাদক তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ওই সরকারটি তারাই গঠন করেছিলেন।' মাহমুদুর রহমান আমার দেশে প্রকাশিত নিজের লেখায় সুশীল সম্পাদকের নাম উল্লেখ না করলেও তিনি হচ্ছেন মাহফুজ আনাম।
এর মধ্যে ড. ইউনূসের সরকারের ‘আজীবন শুভাকাঙ্ক্ষী’ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন ডেইলি স্টারের প্রকাশক মাহফুজ আনাম। গত ১৮ই এপ্রিল ডেইলি স্টারে 'আনহেলদি ইলেকশন কন্ট্রুভার্সি মাস্ট বি রিসলভড' শিরোনামে প্রকাশিত এক কলামে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ দেশের আর কোনো সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের কোনো সরকারের পক্ষে কলাম লিখে এভাবে ঘোষণা দেওয়ার নজির নেই।
খবরটি শেয়ার করুন