ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মায়ের লাশ দেখতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে একজনের হাতে বিশেষ ধরনের ধনুক দেখা গেছে, যাকে ‘স্বয়ংক্রিয় ধনুক’ বলে বর্ণনা করছেন অনেকে।
ভিডিওতে উভয় পক্ষের লোকজনকে হেলমেট, লাইফ জ্যাকেট ও পায়ে ক্রিকেটের প্যাড পরে সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা যায়।
সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের অনুসারী এবং বিরামপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান ও ব্যবসায়ী সাচ্চু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে নাসির উদ্দিন নামের একজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হন। নাসির উদ্দিন বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং ইকবাল হোসেনের পক্ষের লোক ছিলেন। আজ রোববার (২৬শে অক্টোবর) বাদ মাগরিব তার দাফন সম্পন্ন হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হারুন ও ইকবালের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত শুক্রবার বিকেলে বিরামপুর গ্রামের হাসেম মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ বেগম (৯৫) মারা গেলে পূর্ববিরোধের কারণে তার ছয় ছেলের মধ্যে চার ছেলে মায়ের লাশ দেখতে পারেননি। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সকাল থেকে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে বল্লম, টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে মাথায় হেলমেট, গায়ে লাইফ জ্যাকেট ও পায়ে ক্রিকেট প্যাড পরে দেশীয় অস্ত্র, তির–ধনুক, ইটপাটকেল ব্যবহার করেন।
আজ রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বিরামপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ। বাজারের দক্ষিণ পাশের একটি বাড়িতে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। রাস্তায় স্থানীয়রা সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনা করছিলেন, আর নারী-পুরুষদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।
জেলা শহরের গোকর্ণঘাট এলাকার বাসিন্দা ইকরাম হোসেন বলেন, ‘খায়ের মিয়া নামে আমাদের এক আত্মীয় এখানে থাকেন। লাশ দাফন হলে যেকোনো সময় আবার সংঘর্ষ হতে পারে। তাই বসতঘরের আসবাব নিয়ে গোকর্ণঘাটে আমার বাড়িতে যাচ্ছি।’
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়।’
হাসিনা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘আমিও বাড়ির সব আসবাব সরিয়ে ফেলেছি। খালপাড় এলাকার মানুষ কী করছে তা দেখতে এসেছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে নাসির উদ্দিনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
খবরটি শেয়ার করুন