ছবি - সংগৃহীত
১লা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। প্রতিবছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিবসটি পালন করে। এইডসের ক্ষতিকর প্রভাব জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়। জনগণকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এইডস সংক্রান্ত নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। বিশ্ব এইডস দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে।’
বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি (এইডসের ভাইরাস) পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়। দেশে গত এক বছরে (২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর) ১ হাজার ৪৩৮ জন নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ বছর এইডসে মারা গেছেন ১৯৫ জন। গতবার যা ছিল ২৬২ জন।
এইচআইভি হলো এক ধরনের ভাইরাস। চিকিৎসকরা বলেন, এইচআইভি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। হাঁচি, কাশি বা থুতু, একই পাত্রে খাবার বা পানি খেলেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই। এমনকি একসঙ্গে ওঠাবসা, খেলাধুলা বা স্পর্শ করলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে রোগটি ছড়ায় না। তবে এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ-সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কনডম ব্যতীত যৌন মিলন করলে এইচআইভি ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া মা থেকে গর্ভাবস্থায় প্রসবের সময় অথবা বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সন্তান আক্রান্ত হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯৮৯ সালে শনাক্ত হওয়ার পর প্রতিবছরই এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। মাঝে মাঝে দু-এক বছর এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমে গেলেও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাই ছিল বেশি। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের বছর বাদ দিলে গত ১০ বছরে এইচআইভিতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগতই বেড়েছে। গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৬। এই বছর রোগী বেড়েছে ১৬২ জন। এ বছর এইডসে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তবে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, বয়সে তরুণদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিবাহিতদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং হিজড়াদের মধ্যেও সংক্রমণ কমছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, এই বছর নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছর। আর ২১ ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর। অথচ গত বছর এই তরুণ বা ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল ১৬ ভাগ। এ বছর মোট আক্রান্তের মধ্যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। গত বছর এ হার ছিল ১২ শতাংশ। মোট সংক্রমণের ১ শতাংশ হিজড়া। গত বছরও তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার এমনই ছিল।
তবে অবাক করার বিষয় হলো, চলতি বছর যতজন এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই বিবাহিত। আর অবিবাহিত রয়েছেন ৪০ শতাংশ। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত রয়েছেন ৫ শতাংশ। বিবাহিতদের আক্রান্তের হার বৃদ্ধি খুবই উদ্বেগজনক।
আগে এইচআইভি নিয়ে অনেক প্রচার করা হতো। বিশেষ করে গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রচার ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। যা মোটেও কাম্য নয়। কারণ এখনও অনেক মানুষ এইডসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত নয়। তরুণ বয়সীরা যেহেতু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, সেহেতু শিশুদেরকে সচেতন করতে পাঠ্য বইতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
দেশে এখন সংক্রমণ ও শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া বেড়েছে। প্রায় সব জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি সংক্রমণ পরীক্ষার সুযোগ আছে। কিন্তু উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত এখন শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চালু হয়নি। যার কারণে সমাজের একটি বৃহৎ অংশ শনাক্তকরণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন।
আই.কে.জে/