শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামিনে মুক্তি পেলেন সংস্কৃতিকর্মী শামীম, নতুন মামলা দায়ের

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৭:৫৫ অপরাহ্ন, ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

পোস্টারের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো কবি, সংস্কৃতিকর্মী ও গ্রাফিকস ডিজাইনার শামীম আশরাফ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। 

মঙ্গলবার (২০শে ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালতে শামীম আশরাফকে হাজির করা হয়। আদালত শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের আদালত পরিদর্শক মো. সফিকুল ইসলাম।

পরে বিকেলে কারাগারে জামিন মঞ্জুরের পত্র পৌঁছালে মুক্তি পান শামীম আশরাফ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগার থেকে বের হলে তাকে বরণ করে নেন সংস্কৃতিকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা। 

এ সময় শামীম আশরাফ বলেন, মানুষ যে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে এবং এখনো সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যেতে চায় সেটিরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে আমাকে ভালোবেসে যাওয়া। এই ভালোবাসা নিয়ে সকল অন্যায় নিপীড়ন ফিরিয়ে দিলাম এবং এই শহরের মানুষও সেভাবে ফিরিয়ে দিল। সত্য ও ভালোবাসার জয় হয়েছে।

এর আগে গত রোববার (১৮ই ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা গ্রাফিটিতে গিয়ে শামীম আশরাফকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ও সাবেক মেয়র ইকরামুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক পোস্টার তৈরি না করার অনুরোধ জানান। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভও করেন শামীম। কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রাফিটিতে যান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মেয়রের বড় ভাই মো. আমিনুল হক শামীম। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ শামীম আশরাফকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। 

এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর সমর্থক এবং বর্তমান এমপি মোহিত উর রহমান শান্তর সমর্থকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। গভীর রাত পর্যন্ত থানা এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দুই গ্রুপের সহস্রাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নেন। পরদিন সোমবার শামীম আশরাফকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে জামিন শুনানি না করে আদালত শামীমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে কবি শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তারের পর নগরীতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তোলপাড়। 

সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, বেনামে সাঁটানো পোস্টারের মাধ্যমে তথ্য সন্ত্রাস ও তথ্য বিকৃত করে কুতথ্য সমাজে প্রচার করে মানুষের মনে সিটি কর্পোরেশনের নাম ক্ষুণ্ন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।  

অন্যদিকে শামীম আশরাফ নানা সময়ে নানাভাবে নগরের সমস্যা সংকট ও দুর্ভোগের কথা বলেছেন জানিয়ে সংস্কৃতিকর্মী ও তার শোভানুধ্যায়ীরা এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। 

গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ময়মনসিংহ, নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনও করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। তারা বলছেন, নাগরিক সমস্যা নিয়ে পোস্টার করা কোনো অপরাধ নয়।

আরও পড়ুন: স্যান্ডি সাহার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা

তবে কবি ও অনুবাদক সাঈদ ইসলাম বলেন, এই শহরের সবচেয়ে পরিচিত মুখদের একজন কবি ও গ্রাফিকস ডিজাইনার শামীম আশরাফ। আওয়ামী লীগের ভক্ত হওয়ার পরও তার চোখে যে সকল নাগরিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে তা সে অকপটে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে বা নাগরিক ব্যানারে প্রতিবাদের আয়োজন করে। কবি, সাহিত্যিক ও বোদ্ধা মহলে প্রিয় নাম শামীম। হঠাৎ কী কারণে তাকে আটক করা হলো তা সকলের কাছেই রহস্য। তবে আমরা মনে করি একজন নাগরিক হিসেবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে কোনোক্রমেই খর্ব করার সুযোগ নেই।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা

সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংস্কৃতিকর্মী ও গ্রাফিকস ডিজাইনার শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে শামীম আশরাফকে অভিযুক্ত করে মামলাটি করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার নন্দী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

সিটি কর্পোরেশনের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত ৭ থেকে ১৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন দেয়ালে সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে বেআইনিভাবে সিটি কর্পোরেশনের লোগো ব্যবহার করে আসামির (শামীমের) ডিজাইনকৃত ও মুদ্রিত পোস্টার সাঁটানো হয়। পোস্টারের বক্তব্যসমূহ ছিল ‘শোষক নয় সেব চায় নগরবাসী’, ‘হোল্ডিং ট্যাক্সের পাহাড়সহ বোঝা কেন সাধারণ মানুষের ওপর চাপাও’, ‘দেশের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে ঠিকাদার ১ জন, মালিক ১ জন, শাসকও ১ জন’, ‘এক পুছেই ৪২০০ অটোরিকশা গরিব চালক মানুষটার কথা কেউ ভাবে না’, ‘আপনি জানেন কি? ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ প্রকল্পে ১৫৭৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে বাকি টাকা ফেরত গেল কেন?’ এ ধরনের তথ্য সন্ত্রাস ও তথ্য বিকৃত করে কুতথ্য সমাজে প্রচার করে মানুষের মনে সিটি কর্পোরেশনের নাম ক্ষুণ্ন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, যা তথ্য সন্ত্রাসের কাজ।

আসামি অনুমতি ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের লোগো ব্যবহার, আসামির কম্পিউটার ডিভাইসে ডিজাইনকৃত নেতিবাচক পোস্টার, নাগরিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে প্রচার করে তথ্য সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সাইবার নিরাপত্তা আইনে অপরাধ করেছেন।

ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী আবদুল মালেক বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। পিবিআইকে তদন্ত শেষে আগামী ১লা এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে যদি কেউ অপপ্রচার করে তাহলে আইনের দৃষ্টিতে অবশ্যই তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে লোগো ব্যবহার করে সে অপপ্রচার চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এসকে/ 

জামিনে মুক্তি শামীম আশরাফ

খবরটি শেয়ার করুন