ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীতে ৩৬ বছরের গৃহসঙ্গীকে (বাসার কাজে সহায়তাকারী) ফুল, উপহার দিয়ে রাজকীয় বিদায়ী সংবর্ধনা দিল সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক কামরুন নাহার ও তাঁর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এন এম শরীয়ত উল্লাহ। গত ১২ই মে রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি বাসায় ভিন্নধর্মী এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, ৭০ বছর বয়সী এই গৃহসঙ্গীর নাম আনোয়ারা বেগম। প্রায় ৩৬ বছর আগে এই অধ্যাপিকার বাসায় কাজ করতে আসলেও কখনো পাকাপাকিভাবে নিজের বাড়ি যাননি। তবে শেষ জীবনে আনোয়ারা বেগমের ভাই বা অন্য স্বজনেরা তাঁকে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছেন বলে এবার তাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তবে যাওয়ার আগে রাজকীয়ভাবে বিদায়ী সংবর্ধনা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব তাহসিনা আফরিন আনোয়ারা বেগম ও তাঁর বিদায় সংবর্ধনার ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতেই ভাইরাল হয়ে পড়ে পোস্টটি। বাসার কাজের মানুষের জন্য এমন আয়োজনকে বেশ ইতিবাচক হিসেবেও দেখছেন নেটিজেনরা।
কামরুন নাহার বলেন, আনোয়ারা যখন রাজধানীর গ্রিন রোডের এই বাসায় প্রথম কাজ করতে আসেন, তখন কামরুন নাহারের শাশুড়ি খুব অসুস্থ। কামরুন নাহার নিজে তখন স্নাতক সম্মানে পড়ছেন, সদ্য দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁর হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা। সেই যে আনোয়ারা এলেন, এরপর আর নিজের বাড়ি যাননি। এভাবেই ৩৬ বছর কেটে গেল।
আনোয়ারা অধ্যাপক কামরুন নাহারকে নিজের পৃথিবী ভাবতেন জানিয়ে বলেন, গত এক বছর ধরে আনোয়ারাকে বাড়ি পাঠানোর চিন্তা করছিলাম। এ কথা ভাবলেই চোখে পানি চলে আসত। অবশেষে গাড়িতে করে বাড়ি দিয়ে আসলাম। পুরো পথ আনোয়ারা আমার হাত ধরে বসে ছিলেন। বিশ্বাসী ও দরদি এই মানুষটি কখনোই শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হতে পারেননি। আপনজনকে আমরা যেমন বিদায় জানাই, আনোয়ারা বেগমকেও তেমনি বিদায় জানিয়েছেন। তিনি তো আমার পরিবারেরই সদস্য।
আরো পড়ুন: চটপটি-ছোলামুড়িসহ ফুটপাতের ৬ খাবারে মিলেছে ডায়রিয়ার জীবাণু
কামরুন নাহারের মেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব তাহসিনা আফরিন বলেন, আমরা তিন ভাইবোন আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আমরা জানি জীবনে বুয়ার অবদান কতটুকু। আম্মু ব্যস্ত থাকলে আমাদের আশ্রয় ছিল এই বুয়া। আমাদের মায়ের মতো তিনি আগলে রেখেছেন সব সময়। আমরা চাই বুয়ার অবসরকালীন সময় ভালো কাটুক।
তিনি জানান, বুয়া চলে গেছে বলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ নয়। আম্মুর নির্দেশে আমরা দুই বোন প্রতিমাসে তাঁর জন্য পেনশনের মতো করে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাব।
জানা যায়, স্বামী-ভাই হারানো স্বামী বর্তমানে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় ভাইয়ের ছেলেদের কাছে আছেন। নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু সেখানেই কাটাবেন।
এসি/