রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** আলোচনা-সমালোচনায় কবি-সাংবাদিক আলতাফ, সহকর্মীরা প্রতিবাদমুখর, সরব নারীনেত্রীরা *** জামায়াত সম্পর্কে কী এনসিপির নতুন উপলব্ধি *** খালেদা জিয়ার সংসদ নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে যা জানাল বিএনপি *** একের পর এক অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জরুরি বৈঠক *** জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কর্মসূচি *** আন্দোলনের জবাবে ট্রাম্প বললেন, ‘আমি রাজা নই’ *** পুঁজিবাজার চাঙা করতে আইসিবিকে ১০০০ কোটি টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা *** অগ্নিনির্বাপণে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে, দাবি উপদেষ্টার *** নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন পর্যটকেরা *** দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ

অগ্নিঝরা ২৩শে মার্চ

পাকিস্তান দিবসে সর্বত্র ওড়ে বাংলাদেশের পতাকা

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:১৯ অপরাহ্ন, ২৪শে মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের অধিবেশনে এ কে ফজলুল হক ‘লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন’ করেন। এর ৩১ বছর পর আরেক বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৩শে মার্চ ঘোষণা করেন প্রতিরোধ দিবস।

বঙ্গবন্ধু দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করেছিলেন এবং প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সবার বাড়িতে সেদিন ওড়ে বাংলাদেশের পতাকা, তার পাশে কালো পতাকা।

প্রতি বছর পাকিস্তান দিবসের ভোরে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হতো। কুচকাওয়াজ, সভা সমাবেশ ও নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, এবারের ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবস হিসেবে নয়, প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হবে।

সেদিন ভোরে রাজধানীর সচিবালয়, হাইকোর্ট, সব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি কালো পতাকাও উত্তোলন করা হয়। 

একমাত্র প্রেসিডেন্ট ভবন, গভর্নর হাউস, ক্যান্টনমেন্ট ও তেজগাঁও বিমানবন্দরেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এদিন পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল ৯টায় আউটার স্টেডিয়ামে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে জয় বাংলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ ও যুদ্ধের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ঢাকা পতাকার নগরীতে পরিণত হয়।

ভোর থেকেই ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, চাকরিজীবী ও শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনতা একের পর এক মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে জড়ো হয়। মিছিলে অংশ নেওয়া সর্বস্তরের মানুষের হাতে হাতে বাঁশ ও লাঠিসহ নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র ছিল। জনতার কণ্ঠে ছিল সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান ও জয় বাংলা স্লোগান।

সকালে ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। একই সঙ্গে উড়ানো হয় কালো পতাকাও। এ সময় সমবেত কণ্ঠে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশিত হয়। উত্তোলন শেষে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা সামরিক কায়দায় পতাকার প্রতি সালাম জানান। বঙ্গবন্ধু উপস্থিত সর্বস্তরের জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। যতদিন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির সার্বিক মুক্তি অর্জন না হবে, যতদিন একজন বাঙালি বেঁচে থাকবে, এ সংগ্রাম আমাদের চলবে। মনে রাখবেন, সর্বাপেক্ষা কম রক্তপাতের মধ্য দিয়ে যিনি চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন, তিনিই সেরা সিপাহশালার। তাই বাংলার জনগণের প্রতি আমার নির্দেশ, সংগ্রাম চালিয়ে যান, শৃঙ্খলা বজায় রাখুন, সংগ্রামের কর্মপন্থা নির্ধারণের ভার আমার উপরই ছেড়ে দিন।’

১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে দিনটি সম্পর্কে বলা হয়, ‘আজ (মঙ্গলবার) ২৩শে মার্চ লাহোর প্রস্তাব দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিন ছুটি ঘোষণা করিয়াছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এই দিবসটি প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করার আহ্বান জানাইয়াছেন।’ প্রতিবেদনে এদিনের বিস্তারিত কর্মসূচিও তুলে ধরা হয়।

২৩শে মার্চ দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় ‘আজ প্রতিরোধ দিবস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২৩শে মার্চ ঢাকা টেলিভিশনে পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান থাকলেও ঢাকা টেলিভিশনের বাঙালি কর্মীরা পাকিস্তান দিবসের কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করতে দেননি। পাকিস্তানের জাতীয় সংগীতের বদলে এদিন প্রচারিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত- ‘আমার সোনার বাংলা’। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার বদলে পর্দায় ভেসে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের তাৎপর্যে ২৩শে মার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন পাকিস্তানকে প্রতিরোধ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকায় ছেয়ে যায় পুরো দেশ।

এইচ.এস/



ঐতিহাসিক দিবস

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250