শনিবার, ১৮ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** যারা বলেন এবার ‘জামায়াতের শাসন দেখি’, তাদের উদ্দেশ্যে যা বললেন আনু মুহাম্মদ *** ‘রক্ত দিতে হলে সামনের সারিতে, ক্ষমতার প্রশ্নে খুঁজে পাওয়া যাবে না’ *** ‘দোসর’ বলার জন্য বিএনপির সালাহউদ্দিনকে ক্ষমা চাইতে হবে: নাহিদ *** হিজাব নিষিদ্ধে পর্তুগালের পার্লামেন্টে বিল পাস *** ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে ফ্যাসিস্ট বাহিনী বিশৃঙ্খলা করেছে: সালাহউদ্দিন *** শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আগুন, ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক *** ৯ নম্বর, সহজেই সমাধান করা যাবে: পাকিস্তান-আফগান যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প *** ৪৫ বছর ছদ্মবেশে বিলাসী জীবন, অবশেষে বিচারের মুখে গুম-খুনের হোতা *** ত্রিপুরায় পিটুনিতে নিহত তিন বাংলাদেশিকে ‘চোরাকারবারি’ বলল ভারত *** জাতীয়ভাবে লালন উৎসব উদযাপন অব্যাহত থাকবে: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

রাত কেন টার্গেট ইরান-ইসরায়েলের?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:০৩ অপরাহ্ন, ১৬ই জুন ২০২৫

#

তেল আবিবের আকাশে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: এএফপি

সাইরেনের শব্দে যখন রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙে আর ইসরায়েল বা ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে, তখন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কৌশল নিয়ে একটি বিশেষ চিত্র সামনে আসে—রাতের আঁধার। বারবার রাতের বেলাতেই ইরান বা ইসরায়েল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয় বরং এটি গোপনীয়তা, চমক এবং ভয় সৃষ্টির এক সুচিন্তিত সামরিক ও প্রযুক্তিগত কৌশল।

যদিও রাত কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়, তারপরও রাতের আঁধারে হামলার পেছনে গভীর কারণ রয়েছে। এটি প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তা এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের এক সমন্বিত রূপ। তথ্যসূত্র জেরুজালেম পোস্টের।

উড়োজাহাজ যেমন তার জ্বালানি পোড়ানোর জন্য বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেনের ওপর নির্ভর করে, ক্ষেপণাস্ত্র তেমনটা পারে না। প্রপেলার হিসেবে কাজ করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি এবং অক্সিডাইজার—দহন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান—উভয়ই নিজস্ব সিস্টেমে বহন করতে হয়। কারণ, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন উচ্চতায় পৌঁছায় যেখানে অক্সিজেন খুব কম বা একেবারেই থাকে না।

এ মৌলিক প্রয়োজনীয়তার কারণে ক্ষেপণাস্ত্র দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত—তরল জ্বালানি চালিত এবং কঠিন জ্বালানি চালিত। এ দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রেরই নিজস্ব কৌশলগত প্রভাব রয়েছে।

ইরানের শাহাব সিরিজের মতো দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সাধারণত তরল জ্বালানি ব্যবহার করে। এ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে একটি জটিল জ্বালানি প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয়, যেখানে জ্বালানি এবং অক্সিডাইজারের জন্য দুটি আলাদা ট্যাংক থাকে। এ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর জন্য স্থির উৎক্ষেপণ অবকাঠামো ও গ্রাউন্ড ক্রু প্রয়োজন।

এ কারণে জ্বালানি ভরার পর্যায়টিই ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়, বিশেষ করে শত্রুর স্যাটেলাইট ও নজরদারি বিমানের চোখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। শনাক্তকরণ ও হামলার ঝুঁকি কমাতে ইরান প্রায়শই রাতে জ্বালানি ভরার কাজ সম্পন্ন করে, যখন দৃশ্যময়তা কম থাকে এবং আকাশপথে শনাক্ত হওয়ার সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

অন্যদিকে ফাতেহ-১১০ এবং জুলফিকারের মতো স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সাধারণত কঠিন জ্বালানি চালিত। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতরেই একই সঙ্গে জ্বালানি ও অক্সিডাইজারের মিশ্রণ ভরা থাকে। এগুলো উৎক্ষেপণের জন্য সর্বদা প্রস্তুত। এগুলোর জন্য উৎক্ষেপণস্থলে জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হয় না এবং মোবাইল (চলাচলে সক্ষম) প্ল্যাটফর্ম থেকে নিক্ষেপ করা যায়।

তবে একবার জ্বলে উঠলে কঠিন জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্রের ইঞ্জিন বন্ধ বা এর গতিনিয়ন্ত্রণ করা যায় না। উৎক্ষেপণের পর এটিকে থামানোর কোনো সুযোগ থাকে না। অবশ্য বেশি গতি পাওয়ার জন্য অনেক দেশই এই ছাড় দিয়ে থাকে।

ক্ষেপণাস্ত্রের কেন নিজস্ব অক্সিডাইজার প্রয়োজন, প্রশ্নটি প্রায়শই ওঠে। জেট ইঞ্জিন যেমন বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে, ক্ষেপণাস্ত্র ইঞ্জিনকে এমন পরিবেশে কাজ করতে হয় যেখানে অক্সিজেন অপর্যাপ্ত বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক শ' কিলোমিটার পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে, যেখানে অক্সিজেন নেই। এ কারণে, ধারাবাহিক প্রপালশন নিশ্চিত করতে এসব ক্ষেপণাস্ত্রে জ্বালানি দহনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু শুরু থেকেই বহন করতে হয়।

কঠিন ও তরল উভয় ধরনের জ্বালানি চালিত ক্ষেপণাস্ত্র, মোবাইল উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম এবং রাতের প্রাকৃতিক আবরণকে কাজে লাগিয়ে ইরান এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা টিকে থাকা, চমক এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবকে অগ্রাধিকার দেয়—এমনকি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যদি তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থও হয়। প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার চলমান যুদ্ধে, উৎক্ষেপণের সময় ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

এইচ.এস/

ইরান-ইসরায়েল সংকট

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250