সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে ৫৪ বছর বয়সে এসএসসি পাশ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:২৪ পূর্বাহ্ন, ৯ই আগস্ট ২০২৩

#

দশম শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালীন ভালো পাত্র পেয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন বাবা। সেখানেই মেয়ের পড়াশুনার ইতি টানা হলো। মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষাটাও হলো না দেওয়া। জ্ঞানার্জনে অদম্য ইচ্ছা থাকলেও শ্বশুরবাড়ির চাপে শেষ পর্যন্ত আর পড়াশুনা করতে পারেননি মেয়েটি। তবে মনের জোর থাকলে কি না হয়! কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তাইতে মনের জোর আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে ৫৪ বছর বয়সে শাম্মী নামের সেই বিয়েটি এসএসসি পাশ করল। 

শাম্মী আক্তারের বাড়ি খুলনা নগরের করিমনগর এলাকায়। এবছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৮২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর খবরে তাঁর পরিবারে যেন আনন্দের বন্যা বইছে। নিজেও যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি তাঁর স্বামী, ছেলে, ছেলের স্ত্রীও খুশি হয়েছেন।

তবে নতুন করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি মোটেও সুখকর ছিল না শাম্মী আক্তারের। ২০১৯ সালে ছেলে ও স্বামীর উৎসাহে নতুন করে পড়াশোনা করার আগ্রহ জাগে তাঁর। ওই বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খুলনা নগরের ইকবাল নগর বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। দুই মাস সেখানে ক্লাসও করেন। পরে ওই বিদ্যালয়ের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসির কোর্সটি বাতিল হয়ে যায়। তাঁকে বদলি করা হয় পাশের বি কে ইউনিয়ন ইনস্টিটিউটে। কিন্তু পরে জানতে পারেন তাঁর ভর্তি বাতিল হয়ে গেছে। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়াশোনার আশা ছেড়ে দেন তিনি।

এব্যাপারে শাম্মী আক্তার বলেন, ২০২১ সালে মুঠোফোনে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের পাঠানো খুদে বার্তায় আবার ভর্তি হওয়ার কথা জানতে পারেন। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে টাকা জোগাড় করে আবার এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম দিন বাড়িতে বই নিয়ে আসেন লুকিয়ে। পরে স্বামী ও সন্তানকে জানিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। প্রতি শুক্রবার ক্লাস করতেন, করেছেন কোচিংও। রাত জেগে পড়াশোনাও করেছেন। তাঁর পড়াশোনায় সহযোগিতা করতেন স্বামী-সন্তানেরা।

শাম্মী আক্তারের বড় ছেলে মো. মামুনুর রশীদ খুলনার আযমখান সরকারি কমার্স কলেজ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে নোয়াখালীর লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক মহিলা কলেজের প্রভাষক। ছোট ছেলে এম এম আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৯ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন (বিভাগ) থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন হাঙ্গেরির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। স্বামী মো. হাফিজুর রহমান মোল্লা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট।

শাম্মী আক্তারের জন্ম ১৯৬৯ সালে নড়াইল জেলায়। তাঁর বাবা কাজী জাহিদুর রহমান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। দুই বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজ। টানাটানির সংসারে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবা আরেক সৈনিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন।

স্বামী হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনও ঘটনা ঘটেছে যে রাত ১১টার দিকে বাইরে থেকে বাসায় এসে দেখি শাম্মী পড়াশোনা করছে। সামনে চা বানিয়ে রাখলেও কখন যে ঠান্ডা হয়ে যেত খেয়াল করত না। পড়াশোনাকে খুব সিরিয়াসভাবেই নিয়েছিল। এ কারণেই পাস করতে পেরেছে।’

নিজের পড়াশোনার কথা বলতে গিয়ে আবেগে গলা কাঁপে শাম্মী আক্তারের। তিনি বলেন, নিজেদের অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়েছেন। কোনো সার্টিফিকেট না থাকলেও বিভিন্ন ধরনের বই নিয়মিত পড়তেন। পড়াশোনার চর্চা ছিল। নতুন করে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার পর বিশ্বাস ছিল পারবেন।

পরিশেষে শাম্মী বলেন, ‘এটা তো কেবল শুরু। পড়াশোনা চালিয়ে যাব। সামনে এইচএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হব। যত দিন সুস্থ থাকব, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।’

এম.এস.এইচ/


এসএসসি

খবরটি শেয়ার করুন