ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দ্বারা নির্দেশিত পদক্ষেপগুলো মাথায় রেখে তহবিল সুরক্ষিত করার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে।
শনিবার এ পরিবর্তনগুলো উন্মোচন করার সময় অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার হাউসকে বলেন, অমীমাংসিত পর্যালোচনাটি সম্পূর্ণ করার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে পাকিস্তান এবং আইএমএফ গত তিন দিন ধরে বিস্তারিত আলোচনা করছে।
সরকার এখন ফেডারেল ডেভেলপমেন্ট বাজেট বা সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন না কমিয়ে আগামী অর্থবছরে আরও ২১৫০ কোটি রুপি কর এবং ব্যয় কমিয়ে ৮৫০ কোটি রুপি ব্যয় করার লক্ষ্য নিয়েছে।
ফলে সরকারের ৯.৪১৫ ট্রিলিয়ন রুপি রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য পূরণ হবে এবং মোট ব্যয় ১৪.৪৮ ট্রিলিয়ন রুপি হবে। প্রদেশের শেয়ারও ৫.২৮ ট্রিলিয়ন রুপি থেকে বাড়িয়ে ৫.৩৯ ট্রিলিয়ন রুপি করা হবে।
তাছাড়া সরকার চলতি হিসেবের ঘাটতি কমাতে ডিসেম্বরে আমদানির বিধিনিষেধও তুলে নিয়েছে।
বেনাজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৫০০ কোটি থেকে ৪৬৬০ কোটি চলতি অর্থবছরের জন্য ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া পেট্রোলিয়াম ডেভেলপমেন্ট লেভি প্রতি লিটার ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হবে।
প্যারিসে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং সামিটের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার সাথে দেখা করার একদিন পর বাজেটে পরিবর্তন আনা হয়।
২০১৯ সালে সম্মত তহবিলের চলমান ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হতে চলেছে৷ এ অবস্থায় দেশটি নভেম্বর থেকে আটকে থাকা ১১ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে৷
গত কয়েক মাস ধরে আইএমএফের সাথে নবম পর্যালোচনা নিয়ে পাকিস্তানের জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। তাদের উদ্বেগের কথা মাথায় রেখে দার বলেন যে আইএমএফের সাথে পাকিস্তানের নবম পর্যালোচনার সফলতা নিয়ে তিনি আশাবাদী।
৯ জুন বাজেট পেশ করার সময়, দার ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একটি মিনি-বাজেটে প্রবর্তিত ৫০০০ কোটি রুপি মূল্যের সমস্ত কর ছাড়াও ২২৩০ কোটি রুপির নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা ঘোষণা করেন। আসন্ন অর্থবছরের জন্য নতুন কর ব্যবস্থার যোগফল এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৯৩৮০ কোটি রুপিতে।
সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ৩.৫ শতাংশের প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২১ শতাংশের গড় মূল্যস্ফীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থার ভিত্তিতে ২৮ শতাংশের বেশি রাজস্ব লক্ষ্য অর্জনের আশা করছে।
বাজেটের মোট ব্যয় এখন ১৪.৪৮ ট্রিলিয়ন।
এদিকে, পিএমএল-এন দ্বারা জারি করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ লন্ডনে যাওয়ার আগে প্যারিসে আইএমএফ প্রধানের সাথে তৃতীয় বৈঠক করেন যেখানে তিনি তহবিলের কর্মসূচি সম্পূর্ণ করার জন্য পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
পর্যালোচনা সম্পূর্ণ করার অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রযুক্তিগত দলও গত তিনদিনে আইএমএফ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসেছেন। বৈঠকে তারা অতিরিক্ত কর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন ও ব্যয় হ্রাসের ব্যাপারে একমত হন। সরকার ব্যাংক থেকে নগদ উত্তোলনের উপর ০.৬ শতাংশ কর সহ সুপার ট্যাক্স অক্ষত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আয়কর অধ্যাদেশে নতুন প্রবর্তিত ধারা ৯৯ডি অনুযায়ী, বহিরাগত কারণগুলোর ফলে অপ্রত্যাশিত লাভের উপর ৫০% পর্যন্ত করের হার সক্ষম করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই কর শুধুমাত্র কর্পোরেট সেক্টরের জন্য প্রযোজ্য, ব্যক্তিদের জন্য নয়।
এছাড়াও ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অদক্ষদের জন্য ২০০০ রুপি ফেডারেল আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে। এ পদক্ষেপ নির্মাতাদের দক্ষ প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
সিনেট অর্থবিলে ৫৯টি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ১৯টি সাধারণ সুপারিশ রয়েছে।
সরকার নতুন তিন সদস্যের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করেছে। এর নেতৃত্বে থাকবেন হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি; অন্য দুই সদস্য হবেন আয়কর প্রধান কমিশনার এবং একজন করদাতা বা তাদের প্রতিনিধি।
আরো পড়ুন: চীনকে শক্তিশালী সংকেত ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের
কমিটিটি বর্তমানে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ায় আটকে থাকা প্রায় ৩.২ ট্রিলিয়ন টাকার ৬২ হাজার মামলার সমাধান করতে কাজ করবে। এখানে করদাতাদের আপিল করার সুযোগ থাকবে।
এছাড়াও, পেনশন বেনিফিট অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগের সীমা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
আইএমএফের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অর্থমন্ত্রী নতুন করের ঘোষণা দিলেও বিস্তারিত কিছু এখনও বলেন নি। আশা করা হচ্ছে, রবিবার অর্থবিলে আরও কর সংশোধন আনবে সরকার।
এম এইচ ডি/ আইকেজে