মরিচ- ছবি: সংগৃহীত
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর ক্ষেত আর আঙিনা জুড়ে এখন শুধু মরিচ আর মরিচ। চারিদিকে শুকনো মরিচের ঝাঁজালো গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় এবার মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে মরিচের দামও আশানুরূপ পাচ্ছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, বিগত বছরে মরিচের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবারও উপজেলার কৃষকরা মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে আটোয়ারীর ছয় ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ যেন পাকা মরিচের লালগালিচায় ঢেকে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচ শুকাতেও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না কৃষকদের। প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে স্ত্রী-পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের সবাই মিলে মহাআনন্দে মরিচের খেতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক পরিবারগুলো।
সরেজমিনে উপজেলার তোড়িয়া, মির্জাপুর, আলোয়াখোয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক পরিবারের সবাই মিলে কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে খেতের টকটকে লাল মরিচ তুলে খেলার মাঠ, রাস্তার ধার, পুকুরপাড়, বাড়ির আঙিনা, ছাদসহ ফাঁকা জায়গায় মরিচ শুকাচ্ছেন। মরিচ চাষে শুধু কৃষকই নন, শ্রমিকরাও লাভবান হচ্ছেন। ক্ষেতে কাজ করে সংসারে বাড়তি আয় করতে পারছেন নারী শ্রমিকরা।
উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের নারী শ্রমিক রাহেলা খাতুন বলেন, মরিচ চাষের কারণে আমাদের কাজের অভাব নেই। প্রতিদিন ক্ষেত থেকে মরিচ তুলি। ঢাকি (বাঁশের পাত্র) প্রতি ৬০ টাকা করে দৈনিক ৬০০ টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যায়।
উপজেলার তোড়িয়া সুখাতি গ্রামের কলিম উদ্দীন জানান, তিনি এ বছর এক একর জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯১ হাজার ৪০০ টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪ মণ শুকনো মরিচ মণ প্রতি ১২ হাজার টাকা দরে চার লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করেছেন।
তিনি আশা করছেন, আরও প্রায় তিন-চার মণ মরিচ বিক্রি করতে পারবেন।
পশ্চিম তোড়িয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ৬২ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে সাড়ে ১১ হাজার টাকা মণ দরে ২৫ মণ মরিচ বিক্রি করেছেন।
আলোয়াখোয়া গ্রামের ভবেন চন্দ্র বর্মন জানান, তিনিও এক একর জমিতে মরিচ চাষ করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মণ শুকনো মরিচ ঘরে তুলেছেন।
আরো পড়ুন: এক হাটে প্রতিদিন কোটি টাকার লিচু বিক্রি
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. পইমুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চলতি মৌসুমে মরিচ গাছে প্রচুর ফলন হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পোকার আক্রমণও কম ছিল। সঠিক পরামর্শ মেনে চাষ করায় কৃষকরা এবার লাভবান হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরজাহান খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় তিন হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন। এ বছর মরিচের ভালো ফলন হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।
এম এইচ ডি/এম/
খবরটি শেয়ার করুন