ছবি : সংগ্রহিত
চীনে আবার জ্বর, সর্দি-কাশি ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সাধারণের মধ্যে। নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে বাড়ছে শিশুদের ভিড়। এবার সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে শিশুদের মধ্যে। চীনের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি চিন্তা বাড়াচ্ছে ভারতের নাগরিকদেরও। কেন্দ্র সরকারের তরফে দেশের ছ’টি রাজ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে নজর রেখে সতর্কতা জারি করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, গুজরাত, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটক, হরিয়ানা ও তামিলনাড়ু। এই রোগে জ্বর, সর্দি, শুকনো কাশি, হাঁচি, খাওয়ার অনীহা, কাঁপুনির মতো উপসর্গ থাকছে বলে জানা যাচ্ছে। এর আগে চীন থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনার মতো অতিমারি। ফলে সে দেশেই আবার এমন আপৎকালীন পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে জনসাধারণের মধ্যে। কিন্তু কেন হচ্ছে এই সংক্রমণ? আগাম সতর্কতা নেওয়ার কি দরকার আছে? জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।
রোগের ধরন বুঝতে হবে
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটা কোনও একটা ভাইরাস নয়। এইচনাইনএনটু, মাইকোপ্লাজ়মা, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, সার্স-কোভিড টু এমন অনেক ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তবে প্রত্যেকটা ভাইরাসের একটা সিজ়ন থাকে, ওখানে এখন এই সিজ়নটা চলছে। যেমন, আমাদের এখানেও এ বছরের গোড়ায় অ্যাডেনোভাইরাসের দাপট বেড়েছিল। অনেক শিশুই তখন আক্রান্ত হয়েছে, ভুগেছে, আবার সেরেও গিয়েছে। আগেও এমন হত। কিন্তু তখন এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হত না বলে ধরাও পড়ত না। এখন টেস্ট করে বোঝা যাচ্ছে, কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। চীনেও এখন তেমনই একটা পরিস্থিতি চলছে।” তবে বেশ কয়েকটা ভাইরাস একসঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলেই হয়তো আক্রমণের শক্তিও বাড়ছে। সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট রিপোর্ট অবশ্য বাইরে আসেনি। তবে এখনই এখানে এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই।
এ বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, “যে খবরটুকু এখনও পর্যন্ত বাইরে আসছে, তাতে জানা যাচ্ছে যে ফুসফুসে সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে বাচ্চারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে অন্য একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, যে ইনফেকশনটা বাচ্চাদের হচ্ছে, তার জীবাণু শনাক্ত করা যায়নি। সেই খবরের সত্যতা কতটা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। তবে চীনের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যাতায়াতে এখনও যেহেতু কোনও বিধিনিষেধ নেই, তাই চীন থেকে এ দেশে আগত মানুষদের স্ক্রিনিং করতে হবে। সেটাই আপাতত দরকার।” যে-যে ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, সে বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট এখনও চীন প্রকাশ করেনি। তবে চীন ও এ দেশের মধ্যে যেহেতু বিমানপথে মানুষের যাতায়াত অব্যাহত। তাই চীন থেকে আসা নাগরিকদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে কিছু দিন পর্যবেক্ষণে রাখার উপরেই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, চীনে এই সংক্রমণে মৃত্যুহার বেশি নয়। ফলে অতিমারির আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কী কী সতর্কতা মেনে চলবেন
চীনের পরিস্থিতি নিয়ে এখনই উদ্বেগের কারণ না থাকলেও সামনে যেহেতু ঠাণ্ডার মরসুম, তাই সর্দি-কাশি-জ্বর ও অন্যান্য অসুখবিসুখ থেকে সাবধানে থাকার কথা বললেন চিকিৎসকরা।
বিশেষত অনেক শিশুরই ইনহেলার চলে। হাঁপানির সমস্যা রয়েছে। শীতে এই ধরনের সমস্যাগুলো বাড়তে পারে। তাই এ বিষয়ে আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার বলে মনে করছেন ডা. অপূর্ব ঘোষ। হাঁপানির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো থেরাপি নিতে হবে।
আরো পড়ুন : শীতে মাইগ্রেন থেকে রেহাই পেতে
আর একটি দিকও উল্লেখ করলেন তিনি। শিশুরা যেন রুটিন ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে রাখে। শিশুর সামনে যে ভ্যাকসিন দেওয়া বাকি আছে, সেগুলো দিয়ে নিতে হবে। অনেকেই হয়তো প্রত্যেক মরসুমে ফ্লু ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন সন্তানকে। সেগুলো দেওয়া না থাকলে ভ্যাকসিন দিয়ে রাখতে হবে। স্কুলগুলোকেও খেয়াল রাখতে হবে, ক্লাসের সব শিশুর ভ্যাকসিনের ডোজ় নেওয়া আছে কি না। কারণ স্কুলে একাধিক বাচ্চা একে অপরের সংস্পর্শে আসে। তাই সেখানে সংক্রমণের ভয় বেশি।
সকালে স্কুলে যাওয়ার সময়ে বাচ্চার কান-মাথা ঢেকে যতটা সম্ভব সুরক্ষিত রাখতে হবে। আর রাস্তায় যাতায়াতের সময়ে একটা মাস্ক পরিয়ে রাখা যায়। কারণ রাস্তায় এ সময়ে ধুলোও বাড়ে বেশি। আগে থেকে ঠাণ্ডা লেগে থাকলে, তার সঙ্গে ধুলো থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। ডাস্ট বা পোলেন অ্যালার্জি থাকলে সে বিষয়ে সাবধান হতে হবে।
বাচ্চার সর্দি-কাশির ধাত থাকলে তাকে স্টিম নেওয়া বা গার্গল করার অভ্যাস করাতে পারেন। এতে গলা পরিষ্কার থাকবে। অভিভাবকদেরও খেয়াল রাখতে হবে যে, নিজেদের সর্দি-কাশি-জ্বর হলে সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
চীনের পরিস্থিতি নিয়ে ভয় না পেয়ে যেটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার, সেটুকু কী ভাবে করা যায়, সে দিকে নজর দিতে হবে।
এস/ আই. কে. জে/