বৃহস্পতিবার, ৩রা এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** স্বামীকে ইউক্রেনীয় নারীদের ধর্ষণে উৎসাহ, রুশ নারীর কারাদণ্ড *** ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে নিরাপত্তার শঙ্কা *** ড. ইউনূসের 'সেভেন সিস্টার্স' নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ *** 'সেভেন সিস্টার্স' নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যে 'ঝড়' থামছে না ভারতে *** বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে *** 'সংখ্যালঘু সদস্য হিসেবে এখন কতটা নিরাপদ' প্রশ্নে যা বললেন দেবপ্রিয় *** ছেলে তারেকের পরিবারের সঙ্গে লন্ডনের পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছেন খালেদা জিয়া *** ভারতের বদলে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর চীনে কেন, ব্যাখ্যা দিলেন ড. দেবপ্রিয় *** মরণোত্তর অঙ্গদানে নিবন্ধন করেছেন ৭০ লাখের বেশি চীনা *** ইউনূস-মোদির বৈঠক হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: শুভ জন্মদিন 'আলোকিত মানুষ' তৈরির কারিগর

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১২:৪৪ অপরাহ্ন, ২৫শে জুলাই ২০২৩

#

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ - ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আশা জাগানিয়া মানুষ। যিনি সবাইকে বলেন, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তুমিও তাই।’ প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখান মানুষকে। তার জীবনের চেষ্টাই হচ্ছে সুন্দরকে খোঁজা। অধ্যাপক সায়ীদের কথায়, ‘যারা পড়ান তারা সবাই শিক্ষক। কিন্তু সব শিক্ষক ‘গুরু’ হয় না।’ তবে তিনি সকলের ভালোবাসার শিক্ষক, গুরু। সকলেই ভালোবেসে ‘স্যার’ সম্বোধন করেন তাকে। আজ ২৫ জুলাই অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে 'আলোকিত মানুষ' তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়; দেশব্যাপী আলোকিত মানুষ তৈরির এক আন্দোলনও বটে, যা দিনে দিনে আলোকিত জাতীয় চিত্তের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। মানবজ্ঞানের সামগ্রিক চর্চা এবং অনুশীলনের পাশাপাশি হৃদয়ের উৎকর্ষ ও জীবনের বহু বিচিত্র কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উচ্চতর শক্তি ও মনুষ্যত্ব বিকশিত হওয়ার এক আয়োজন সায়ীদ স্যারের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

১৭ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালের কথা। ঢাকা কলেজের মূল ক্যাম্পাসের পেছনে শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রের (বর্তমান নায়েম) ছোট্ট মিলনায়তনে শুরু হয়েছিল এক পাঠচক্র, যার সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫। ঠিক হয়েছিল প্রতি সপ্তাহে তাঁরা একটি করে নির্ধারিত বই সেখান থেকে বাড়ি নিয়ে পড়ে পরের সপ্তাহের একই দিনে যথাস্থানে এসে মিলিত হবেন তর্কমুখর অন্তরঙ্গ আলোচনায়। বইয়ের মধ্যে লেখকদের যে আত্মার আলো জ্বলছে, তার সঙ্গে নিজেদের বহুমুখী বোধের আলো মিশিয়ে তাঁরা জেগে উঠবেন উচ্চতর মানবিক সমৃদ্ধির দিকে।


অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ - ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

পাঁচ বছর পর এই পাঠচক্রের আশাতীত সাফল্য দেখে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ভাবলেন, বোধের বিকাশে এ যখন এতটাই ফলপ্রসূ, তখন দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনই চক্র গড়ে তুলবেন। এর পর হাজার হাজার পাঠচক্রের সৃজনশীল আনন্দে দেশের কিশোর-তরুণ থেকে প্রতিটি আলোকপ্রত্যাশী মানুষ যুক্ত হতে থাকেন। বই পড়ার পাশাপাশি নানামুখী সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজেদের উৎকর্ষ ও পরিশীলন, মেধা ও হৃদয়ের উচ্চতর বিকাশ ঘটাতে থাকেন।

১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে ১৫ জন সদস্য নিয়ে যে পাঠচক্রটি শুরু হয়েছিল, আজ সারাদেশে এর সদস্য সংখ্যা ২৫ লাখ। এর কর্মকাণ্ড ও অবয়ব এখন বিশাল।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎবাঁধা, ছককাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সজীব পরিবেশে জ্ঞান ও জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী। এক কথায়, যাঁরা সংস্কৃতিমান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ- যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী; যারা জ্ঞানার্থী, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত এক অঙ্গন।

আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিসে পেরিক্লিসের আমলে, এথেন্সের যুবকদের ১৮ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একটি শপথবাক্য উচ্চারণ করতে হতো। সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হতো, 'আমি সারাজীবনে এমন কিছু করে যাব, যাতে জন্মের সময় যে এথেন্সকে আমি পেয়েছিলাম, মৃত্যুর সময় তার চেয়ে উন্নততর এথেন্সকে পৃথিবীর বুকে রেখে যেতে পারি।' বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেষ্টাও তেমনি এক উন্নততর বাংলাদেশের জন্য।

দেশের তরুণ ও আলোকপ্রত্যাশী প্রতিটি মানুষের মাঝে বইয়ের আনন্দ বিলিয়ে দেওয়া আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালের আজকের এই দিনে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কামারগাতি গ্রামে। তাঁর বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন শিক্ষক। ১৯৫৫ সালে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। 

১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। পরবর্তী সময়ে কিছুকাল সিলেট মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালে রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর সরকারি চাকরি জীবন শুরু। এর পর বর্তমান সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও ঢাকা কলেজেও শিক্ষকতা করেন। দেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা অনুধাবন করে তিনি ১৯৯৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করেন।

আরো পড়ুন: হুমায়ূন আহমেদ: রয়েছো নয়নে নয়নে

বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে তার গ্রন্থভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ডেঙ্গু প্রতিরোধ আন্দোলন, পরিবেশ দূষণবিরোধী আন্দোলনসহ নানা সামাজিক আন্দোলনে তিনি সব সময় সামনের কাতারে। কর্মময় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদক, র‌্যামন ম্যাগসাসে, জাতীয় টেলিভিশনসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন।

জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় লেখক ও শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

এম/ আই. কে. জে/ 


অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। জন্মদিন শুভেচ্ছা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন