শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমলারা কোনো কিছু পরোয়া করেন না : কৃষিমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, ২৩শে মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

আমলারা কোনো কিছু পরোয়া করেন না, তারা তাদের মতো করে চলেন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, কৃষিখাতে আমরা ২০ শতাংশ ভর্তূকি দিচ্ছি। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয় না। আমাদের আমলা, পদ্ধতি, সিস্টেম, মাইন্ড সেট এমন, যত আইনই থাক, তারা কিছু পরোয়া করেন না। তারা তাদের মতো করে চলেন। সার্বিক সিস্টেমটাই এমন। এর দায় আমরা মন্ত্রীরা এড়াতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইন করেছি, আইন কেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয় না? কৃষিপণ্যের মধ্যে আনারস ছিল না। এটাকে কৃষিপণ্যের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য আমার এক বছর সময় লেগেছে।

এই হলো আমাদের দেশের সিস্টেম। সব সময় একটা সংযুদ্ধ। দেশি, বিদেশি, সাধারণ মানুষ, উদ্যোক্তা নিচু স্তর থেকে উঁচু স্তর পর্যন্ত একটা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য। মনে হয়, তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। কারো কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না।

সোমবার (২২ মে) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সিআইপি (শিল্প) ২০২১ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আজ যে ডলারের সংকট, এই সংকট কেন হলো? আজ এখানে যারা (ব্যবসায়ী) আছেন, আপনাদের সবাইকে বলছি, আপনাদের-আমাদের অনেকেই কিছু না কিছু অর্থ আমাদের আয় থেকে বিদেশে নিচ্ছি। আমি কানাডায় বাড়ি করছি। কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়ায় বা অন্য দেশে অর্থ নিচ্ছি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বাড়ি বিক্রি করে ডলার পাঠিয়ে দিচ্ছি। বিদেশে টাকা পাচার করা একটি অপরাধ। এই ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। আসুন যে বিদেশে টাকা নিচ্ছে, তাকে সবাই মিলে ঘৃণা করি, তিরস্কার করি।

১৯৬০ সালে কোরিয়া কী ছিল? এই দেশে কোরিয়ান ছেলেমেয়েরা পড়তে আসত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটে কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপিনসহ ছয়-সাতটি দেশের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসতো। এখন আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা মালয়েশিয়া, কোরিয়ার যায় উচ্চ শিক্ষার জন্য। তারা এমন সচেতনতা সৃষ্টি করেছে যে, কোনো অর্থ বিদেশে নেওয়া যাবে না। কোনো ছাত্র যদি বিদেশে পড়তে যেতে চাইতো, অন্য সহপাঠীরা তাকে তিরস্কার করতো। সমস্ত টাকা তারা দেশে রেখে শিল্পকারখানা গড়েছে, যোগ করেন মন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, উদ্যোক্তারা সৃজনশীন, মেধাবী ও সফল হন। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা গড়ে তুলে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও গতিশীল করছেন। আমাদের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আগে বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৬০ শতাংশের মতো। ক্রমান্বয়ে এটি কমে এখন ১২ ভাগে নেমে এসেছে। সার্ভিস, ম্যানুফেকচার ও শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। এটি খুবই আকাঙ্ক্ষিত এবং এটিই আমরা আশা করছি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানের মতো পৃথিবীর অনেক দেশেই উন্নয়ন হয়েছে কৃষির ওপর ভিত্তি করে। ক্রমান্বয়ে তারা শিল্পের দিকে এগিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ জাতিতে রূপান্তর হয়েছে। আমরাও সেই পথেই অগ্রসর হচ্ছি। তাই বলে কৃষির গুরুত্ব কোনো দিনই কমবে না, বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল আমরা কৃষি থেকে পেয়ে থাকি। টেক্সটাইল শিল্পের মূল কাঁচামাল তুলা আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পাটশিল্প এক সময় অনেক বড় ছিল বাংলাদেশে। এক সময় এটি ছিল আমাদের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি। আমরা এখনো যেসব কৃষিপণ্য উৎপাদন করি, এগুলোরও অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা যদি এসব কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে দেশে এবং বিদেশে রপ্তানি ও বাজারজাত করতে পারি, তাহলে কৃষির সম্ভাবনা আরও অনেক বেশি। কাঁচামাল হিসেবেও এটি শিল্পকে সহযোগিতা করবে।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এখন আমের মৌসুম। আমাদের দেশের আম অনেক সুস্বাদু। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা জানতে চান, কেন আমরা আম আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করি না। এই যে সম্ভাবনা, এটিকে কাজে লাগানো দরকার। শুধু আম নয়, এমন আরও অনেক কৃষিপণ্য আমাদের রয়েছে, যেটার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।


আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্তির অন্বেষণে নিবেদিত: প্রধানমন্ত্রী

দেশের কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে রক্ত, ঘাম দিয়ে সোনালি ফসল উৎপাদন করেন। কষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল উৎপাদন করেন। কিন্তু আমরা সেসব প্রাকৃতিক ফুল ব্যবহার না করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করি। যা পরিবেশ নষ্ট করছে। তাই আমি অনুরোধ করব, প্লাস্টিকের ফুলের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফুল ব্যবহার করতে। এতে কৃষকরাও উপকৃত হবেন, পরিবেশও ভালো থাকবে, যোগ করেন মন্ত্রী।

এসি/ আই. কে. জে/

আমলা কৃষিমন্ত্রী

খবরটি শেয়ার করুন